• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

উন্নত সমাজ গঠনে প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা- আল ইসলাম কায়েদ

আপডেটঃ : রবিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৮

একটি দেশের উন্নতি অবনতি নির্ভর করে জনগনের নৈতিক শক্তির উপর । আর এ নৈতিক শক্তির জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। কারণ নৈতিক শিক্ষা মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। এবং  ভালো কাজে উৎসাহ দেয়।তাই আমাদের প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা গ্রহন করা। মানুষ সাধারনত পরিবার শিক্ষায়তন ও পরিপার্শ্বিকতা থেকে নৈতিক শিক্ষা গ্রহন করে থাকে।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। কারন, জ্ঞান মানুষকে ন্যায় অন্যায়, ভাল মন্দ, সত্য অসত্য, পাপ পূর্ণ্য ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে শিখায়। কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজে কি সে রকমের পরিবার, শিক্ষায়তন ও পরিবেশ কি আছে ঘুষ দুর্নিতী স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা শোষন, নারী নির্যাতন, খুন, গুম হত্যা ধর্ষন, ছিনতাই রাহাজানী, চাঁদাবাজী, মাস্তানী, জুলুম, উৎপীড়ন জঙ্গিবাদ ইত্যাদি আমাদের সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে রয়েছে।
এ সমস্ত অন্যায় অত্যাচার আমাদের সমাজকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। এ সকল কিছুর কারনই হলো আমাদের নৈতিক শিক্ষার অভাব। আর নৈতিকতা শিক্ষা দিবেন কে ? যারা শিক্ষা দিবেন তাদেরই রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছে নীতিহীন কার্যক্রম। তবে সে জন্য সবাই ই নয়, এ সমাজের মানুষ কথায় কথায় বলে পুলিশ ঘুষখোর। কিন্তু সব পুলিশ কি ঘুষ খায় ? না- তা আমি মানতে রাজী নই। প্রতিটি পেশার লোকদের মধ্যে। ভালো খারাপ আছে। সামান্য কিছু পুলিশের জন্য গোটা পুলিশ জাতির কথা উল্লেখ করা ঠিক নয়। তবে একটি কথা না বললেই নয় যে, প্রতিটি পেশার চেয়ে পুলিশের মধ্যে ঘুষখোরের পার্সেন্টিস বেশি। এ কথা বলা যায়, কিন্তু এ ধরণের নীতিহীন কাজ যদি কোন শিক্ষক করে থাকে তাহলে কেমন হয়। ছাত্র জীবন থেকে পড়ে আসছি শুনে আসছি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। মানবদেহের হাত- পা, চোখ, কান কোন অঙ্গ বিকল হলে কাজ চালিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু মেরুদন্ড কিবল হলে দেহ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।
প্রতিটি পেশার মানুষকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। আর শিক্ষা গ্রহণের জন্য যেতে হয় শিক্ষকের কাছে। শিক্ষককে না ছুঁয়ে সমাজে কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই সমাজ গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা খুবই গুরুত্ব পূর্ন। তবে শিক্ষা যদি সু-শিক্ষা হয় তাহলে যেমন সু-নাগরিক হিসাবে এক জন ছাত্রকে গড়ে তোলে তেমনি কু-শিক্ষা মানুষকে অধঃপতনের শেষ প্রান্তে নিয়ে যায়। বর্তমান সমাজে কিছু কিছু শিক্ষকের জন্য শিক্ষক সমাজ আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। আমাদের দেশের প্রতিটি সেক্টরেই যে যেভাবে পারছে ঘুষ খাচ্ছে, দুর্নিতী করছে। আর এগুলে বন্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যক্রম সত্যেও ঘুষ দুর্নিতীর কার্যক্রম স্তিমিত তো হয়ই নাই বরং আরো সংক্রামণ ব্যাধির মতো এগুলের আরো বিস্তৃতি ঘটছে। আর প্রতিটি বিভাগেই এটি এক অলিখিত চুক্তি হয়ে আছে। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে ও যদি এটি চলতে থাকে অর্থাৎ কোন শিক্ষক যদি দুর্নিতী করে থাকে তাহলে সে আর কি নৈতিক শিক্ষা দিবে ? এদেশের গুটি কয়েক শিক্ষকের জন্য সমগ্র শিক্ষক জাতি তাদের শ্রদ্ধার আসন ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ছাত্রকে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিতে নকল সরবরাহ, প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ে কিছু শিক্ষক জড়িত থাকার বিষয়ে প্রতি পরীক্ষায় জনগনের নজরে আছে। এবং প্রায় পাবলিক পরীক্ষার নকলের অভিযোগে যেমনই বহিস্কার হয় শিক্ষার্থী তেমনই বহিস্কার হন শিক্ষকও। বেসরকারী ষ্টেজে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় পাশের হার বাড়িয়ে দিয়ে নিজের চাকুরীর স্থায়ীকরণে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে যাবতীয় অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে পত্র পত্রিকায় প্রায়ই শোনা যায়।
শিক্ষকতায় পেশা একটি আদর্শ ও সেবাধর্মী পেশা, সময় ও সুযোগের সীমা বদ্ধতার জন্য এবং বিবেকের তাড়নায় তারা অবৈধ অর্থ উপার্জন করতে চায় না। কিন্তু বর্তমানে পত্র পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায় সুযোগ পেলে কেউ কেউ এর সদব্যবহার করতেও কুন্ঠাবোধ করে না।
পত্র পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায় শিক্ষায়তনের পরিকাঠামো উন্নয়ন তথা শিক্ষার্থীদের কল্যানমূলক নানা ধরনের কাজের জন্য পর্যাপ্ত ফা- মন্জুর হলে তা তদরুক হয়ে যায়। ইদানিং শিক্ষায়তনের উন্নয়নে ব্যাপক হারে কার্যক্রম চালূ হয়েছে। এগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করনের জন্য শিক্ষকদের তদারকির জন্য জড়িত করা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এ সব প্রকল্পের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ও শিক্ষক জড়িয়ে পড়ছেন। গৃহ নির্মাণ অবকাঠামোসহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের জন্য মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কথা হরহামেশাই ছাপা হচ্ছে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। আবার ইদানিং বেশি দেখা যায় ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য পরিমল চন্দ্রের মতো কিছু কিছু শিক্ষক এমনকি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পর্যন্ত চাকুরী চলে যায়।
রাজনীতিতে জড়িত কিছু শিক্ষক ক্লাশে লেকচার দেয়া বাদ দিয়ে দলীয় সভা সমাবেশে লেকচার দিতে বেশি ব্যস্ত থাকেন। কর্মবিমুখকোন কোন ফাঁকিবাজ শিক্ষকের জন্য এটা ভালো হলেও সৎ ও আদর্শবান শিক্ষকেরা এতে পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকেন এবং অনিচ্ছা সত্যেও অনেকেই জড়িয়ে পড়েন দুর্নিতীতে জড়িয়ে পড়েন এবং ধরা পড়ে গেলে সৎ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষকেরা অতিশয় মর্মাহত ও লজ্জিত হন। তাহলে এ দুর্নিতীবাজ শিক্ষকরা কি পারবেন নৈতিক শিক্ষা দিতে শিক্ষার্থদের ? আর এ রকম শিক্ষকের শিক্ষা গ্রহণ করে ছাত্র-ছাত্রীরা নৈতিকতার বদলে অনৈতিক কাজই করে থাকবেন। কারন সে তো সঠিকভাবে নৈতিক শ্ক্ষিা গ্রহণ করতে পারেনি। তাই ঐ ছাত্র বা ছাত্রী হয়ে উঠে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ঘুষখোর বা দুর্নিতীবাজ।
অতএব এ দুর্নিতীগ্রস্থ অপবাদের ধ্বনি প্রবলতর হওয়ায় পূর্বে দরকার পরিবর্তন। প্রশ্ন ফাঁস নকল সরবরাহ গৃহ নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে নিজেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলা, ক্লাশ রেখে রাজনীতি নয় দায়িত্ব পালন না করে বেতন নয়, ইত্যাদি অপকর্মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্দে শোচ্চার হওয়া সকলের জন্য ও আদর্শবান শিক্ষকেরই উচিৎ চুপচাপ দেখে থাকলেই হবে না।
আর এর জন্য শিক্ষক সংগঠন, পরিচালনা পর্ষদ ও আমাদের এ সমাজের ও ব্যাপক ভূমিকা পালন করা উচিৎ। নচেৎ আগামী দিনগুলোতে এ সমাজে সৎ ও আদর্শবান বলতে কোন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর শিক্ষক সমাজ হয়ে উঠবে পুলিশের জাতের মতে জাতীয় ঘুষখোর। তাই দুর্নিতীর বিরূদ্বে দুর্বার আনোলন গড়ে তোলা উচিত


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ