• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন

নীতির প্রশ্নে অবিচল অনন্য এক সম্পাদক

আপডেটঃ : শুক্রবার, ১ জুন, ২০১৮

উপমহাদেশের সাংবাদিকতা জগতের প্রবাদপুরুষ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার আজ ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬৯ সালের এই দিনে তিনি তাহার জীবনের সকল উজ্জ্বল অর্জন সমর্পণ করিয়া পাড়ি জমান অনন্তলোকে। সশরীরে মানিক মিয়া আজ আমাদের মাঝে উপস্থিত না থাকিলেও তাঁহার আপসহীন ও তেজোদীপ্ত সংগ্রাম-সাধনার আলেখ্য বাঙালির জাতীয় জীবনে অনির্বাণ আলোকশিখার ন্যায় দেদীপ্যমান। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম অগ্রনায়ক এবং স্বাধীন বাংলার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি সাংবাদিকতা করিতেন এক মহান লক্ষ্যকে সামনে রাখিয়া। তাঁহার ‘মোসাফির’ নামে লেখা ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ ছিল এই দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথনির্দেশক। তিনি পাকিস্তান আমলে পরাধীন দেশে কারা নির্যাতন ভোগ করিয়াছেন, ইত্তেফাকের প্রকাশনা বন্ধ হইয়াছে, তথাপি তিনি নীতির প্রশ্নে আপস করেন নাই।

একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসাবে মানিক মিয়া সেই সময়ে তাঁহার কথা লিখিয়াছেন নিঃশঙ্ক চিত্তে। কিন্তু এখন সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আমরা সবকিছুকে অ্যাডজাস্ট করিবার চেষ্টা করিতেছি। আমরা তাঁহার মতো ডেডিকেটেড বা আত্মোত্সর্গকৃত আছি কিনা, সেই প্রশ্ন উঠিতেই পারে। তবে তাঁহার মৌলিক আদর্শ তথা গণতন্ত্র ও অসামপ্রদায়িকতা হইতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হই নাই। একসময় অবজেকটিভ জার্নালিজম বা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হইত। এখনো ইহার গুরুত্ব নাই সেই কথা আমরা বলি না। তবে উন্নয়নশীল বিশ্বে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম বা উন্নয়ন সাংবাদিকতার গুরুত্বই সর্বাধিক।

শুধু সাংবাদিক বা রাজনীতির পথপ্রদর্শকই নন, মানুষ হিসাবেও মানিক মিয়া ছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সর্বোপরি একজন রাজনীতিমনস্ক সাংবাদিক হইয়াও তাঁহার রাজনৈতিক কোনো উচ্চাভিলাষ ছিল না, ছিল না ব্যক্তিগত কোনো লোভ। এই কারণেই নির্মোহ অবস্থান হইতে তিনি সত্যকথা বলিবার সাহস দেখাইতে পারিয়াছিলেন। জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন এবং সরকারের অসহযোগিতাকে মোকাবিলা করিয়া নীতির প্রশ্নে অবিচল থাকিয়া মানুষের অধিকারের কথা বলিতে পারিয়াছেন। আইয়ুব খানের মতো স্বৈরশাসক ও লৌহমানবের সম্মুখে মাথা উঁচু করিয়া দাঁড়াইতে পারিয়াছেন। আজ স্বাধীন দেশে আমরা নানা ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করিতেছি। আমাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা হিমালয়ের চূড়া স্পর্শ করিয়াছে। অথচ মানিক মিয়া ও তাহার সমসাময়িক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিগণ অত্যন্ত সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করিতেন। ফলে তাহারা রাজনৈতিক আদর্শ ও পেশার প্রতি কমিটমেন্ট লইয়া কাজ করিতে পারিয়াছেন। শিরদাঁড়া ‘উন্নত’ করিয়া চলিতে পারিয়াছেন। কিন্তু আমাদের জীবনমান ও চাহিদা আজ এতটাই বাড়িয়া গিয়াছে যে, সেই স্মরণীয় ব্যক্তিদের প্রদর্শিত পথে আমাদের পক্ষে চলা আদৌ সম্ভব কিনা তাহা নিয়া দেখা দিয়াছে সংশয়। সাংবাদিকতার বিনিময়ে কিংবা আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়া বিভিন্ন প্রকার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের কারণেই আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হইয়াছে। এমতাবস্থায় সর্বক্ষণ এই সংশয়ও আমাদের তাড়িত করে যে, পাছে তাঁহার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ হইতে আমরা পিছাইয়া পড়িতেছি কিনা।

পরিশেষে আমরা ইত্তেফাক-এর প্রতিষ্ঠাতা অনন্য এই সম্পাদকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই। তাঁহার রুহের মাগফিরাত কামনা করি এবং প্রার্থনা করি, আল্লাহতায়ালা তাঁহাকে জান্নাত নসিব করুন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ