• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নাই

আপডেটঃ : শুক্রবার, ১ জুন, ২০১৮

পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতারত বেপরোয়া দুই বাসের চাপায় পড়িয়া ঝরিয়া পড়িয়াছে আরো একটি প্রাণ। ত্রিশ বত্সর বয়সী হতভাগ্য রামচরণ সরকার নিজেও একজন বাসশ্রমিক। হেলপার হিসাবে দায়িত্বরত অবস্থায় গত সোমবার রাত্রে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ি এলাকায় তাহাকে এই মর্মান্তিক পরিণতি বরণ করিতে হয়। না, ভরসার কোনো খড়কুটো খুঁজিয়া পাইতেছে না ভুক্তভোগী মানুষ। সড়ক-মহাসড়কে একের পর এক মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটিতেছে। অকালে নিভিয়া যাইতেছে অমিত সম্ভাবনাময় বহু জীবনপ্রদীপ। প্রাণে বাঁচিয়া গেলেও হাত-পা হারাইয়া চিরতরে পঙ্গু হইয়া যাইতেছে অনেকে। মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব— উভয় ক্ষেত্রে ঘোর অন্ধকার নামিয়া আসিতেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলিতে। রাজীবের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এমন একটা আশা তীব্র হইয়া উঠিয়াছিল যে, এইবার অন্তত মালিক-চালক ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষসমূহসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের বোধোদয় হইবে। বন্ধ হইবে রাজধানীতে চলাচলকারী বাসগুলির প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতা। বাসের চালকেরা সংযত হইবেন আর মালিক ও প্রশাসকেরা অন্তত এই একটি ব্যাপারে আপসহীন ভূমিকা গ্রহণ করিবেন। কিন্তু আমাদের সেই আশা বেপরোয়া বাসের চাকায় পিষ্ট হইয়া গিয়াছে আগেই।

দুই বাসের রেষারেষিতে হাত বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছিল তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র লড়াকু তরুণ রাজীব হোসেনের। ঘটনাটি সংঘটিত হইয়াছিল গত ৪ঠা এপ্রিল। কয়েক দিন মৃত্যুর সহিত লড়াই করিয়া রাজীব হার মানিলেও জনমনে তাহা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। কিন্তু সেই ক্ষত শুকাইবার আগেই দুই বাসের বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় নিহত হন ঢাকা ট্রিবিউনের কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন। প্রায় একই সময়ে একই পরিণতি বরণ করিতে হইয়াছে গাড়িচালক রাসেলকেও। ইহার আগে শিশুকন্যাকে লইয়া রিকশায় করিয়া ধানমন্ডির স্কুলে যাওয়ার পথে প্রতিযোগিতারত দুই বাসের চাপায় পড়িয়া মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত পান অপর এক নারী। ইহার পরপরই ফার্মগেটে দাঁড়ানো অবস্থায় বেপরোয়া বাসের চাপায় পা পিষ্ট হইয়া যায় এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উত্তরায় বিআরটিসি বাসের চাপায় বাম পা হারানো স্বাস্থ্যকর্মী আতিকুন নেছা স্বস্তির (৫০) অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। রাজধানীর আবদুল্লাহপুর মোড়ে বিআরটিসির একটি বাস হইতে নামিতেছিলেন এই নারী। কিন্তু তিনি এক পা ফেলার পর অন্য পা ফেলার আগেই বাসটি টান দেয়। ইহাতে তিনি পড়িয়া যান এবং তাহার পায়ের ওপর দিয়া চলিয়া যায় বেপরোয়া বাসটি।

প্রাচীন এক বাঙালি কবি বহু আগেই লিখিয়া গিয়াছেন যে, নগর পুড়িলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না। এখন রাজধানীসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়ক জুড়িয়া যে চরম বিশৃঙ্খলা চলিতেছে তাহা হইতেও যে শেষ পর্যন্ত কেহই রক্ষা পাইবেন না ইতোমধ্যেই তাহার আভাস স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে। দায়িত্বরত পুলিশ, গাড়িচালক ও হেলপারসহ কেহই রক্ষা পাইতেছেন না। এই অবস্থা চলিতে থাকিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করিতে বাধ্য। অতএব, সকলের সম্মিলিত নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই শক্ত হাতে বিশৃঙ্খলার লাগাম টানিয়া ধরিতে হইবে। সর্বোপরি, একটি সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা ছাড়া আমরা যে উন্নত দেশ গড়িবার স্বপ্ন দেখিতেছি তাহাও অধরাই থাকিয়া যাইবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ