সফিউল্লাহ আনসারী
‘আমার বাবা আমার কাছে সবার চেয়ে আপন
চুপি চুপি মনের ঘরে অনকে সুখের কাঁপন।’
বাবা দিবস সারা বিশ্বে পালিত দিবসগুলোর মধ্যে অন্যতম। মা দিবসের সাথে মিল রেখেই এ দিবসের সূচনা বলে অনেকের ধারনা। জুন মাসের তৃতীয় রোববার পালিত হয় বাবা দিবস। এই রোববার বিশ্ব বাবা দিবস। মায়ের মমতার সাথেই যে ¯েœহময় শব্দটি সন্তানদের প্রিয় ডাক, বাবা, আমার বাবা। সময়ে-দু:সময়ে পাশে থেকে যিনি বন্ধুত্বের চিরায়ত মহিমায় ভাস্কর, তিনিই জন্মদাতা পিতা, আমার বাবা। আমার বাবা আমার নীখাদ ভালোবাসা।
যাকে কেউ বাবা, আব্বা, বাপি, আব্বু, বাবুজি নামে ডেকে থাকেন। যে নামেই ডাকা হোক না কেনো তিনি কিন্তু জন্মদাতা হিসেবে আমাদের জীবনে ভালোবাসা এবং সম্মানের পাত্র। সন্তানের প্রতিটা দুঃসময়ে বাবা থাকে পরিক্ষিত বন্ধুর মতো। পরম মমতায়, ¯েœহের বাঁধনে বুকে আগলে রাখেন বাবা। যার বাবা এই দুনিয়ায় নাই, সেই বুঝে বাবার প্রয়োজনীয়তা।
শ্রাবন্তী মজুমদারের গাওয়া গানটির মতো- কাটে না সময় যখন আর কিছুতে/বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না/জানালার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা/মনে হয় বাবার মত কেউ বলে না/আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়..। এই গানটি সন্তানদের আবেগে আপ্লুত করে, করে ভালোবাসার মূর্ছনায় ¯েœহধন্য।
অবুঝ শিশুর হৃদয়কে মুহূর্তেই আন্দোলিত করে যে ডাক, তা মা-বাবা। শিশুর উচ্চারনের সারল্য ভরা সহজ ডাক বাবা। সন্তান জন্মের পরেই বাবার হাতটি ধরে নির্ভয়ে হাঁটতে শিখে, চলতে শিখে। চলার পথে পাশে থেকে সাহস যোগান বাবা। বাবার দেখানো আদর্শের পথে সন্তান নিজের চেষ্ঠায় এগিয়ে চলে ভয়হীন, কারন বাবা তো আছেই। ভুল হলে শোধরে দেন তিনিই পরম মমতায়। কখনো বা সারল্যে ভরা মিষ্টি শাসনে। আর পিতা যাই করেন, সন্তানের মঙ্গলের জন্যই।
‘বাবা আমায় সব শেখালেন সত্য কথা বলার
সবার সাথে মিলে মিশে সত্য কথা বলার ।’
বিশ্বের প্রায় ৫২ দেশে এ দিনটিতে বাবা দিবস পালিত হয়। যদিও বাবার প্রতি কোন সন্তানের জন্য নিদিষ্ট কোন দিন বা দিবসেই বাবার প্রতি ভালোবাসা পুর্ণতা পায়না, তারপরও ব্যাক্তি জীবনের ব্যাস্ততার এই সময়ে কেবল পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা প্রকাশের জন্য দিনটি বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয়। কমপক্ষে একটি দিন বাবার জন্য বিশেষ বরাদ্ধ তাঁর মর্যাদাকে খাঁটো করে নয়, বরং বাড়িয়ে দিতেই পালিত হয়।
আমার বাবা, আমার ভালোবাসা, আমার নির্ভরতা। বাবার স্থান শুধু বাবার দখলেই আর কারো নয়। সন্তানের মাথার উপরে ¯েœহ আর ভালোবাসায় বটবৃক্ষের ছায়া একমাত্র বাবাই দিতে পারেন। ¯েœহ আর মমতায় দৃঢ় বন্ধনের এক অনবদ্য উচ্চারিত নাম-‘বাবা,বাবা এবং বাবা’।
‘আমার বাবা হৃদয় জুড়ে বাজায় বাঁশির সুর
বাবা ডাকে সুখ খোঁজে পাই হৃদয় সমুদ্দুর।’
নতুন প্রজন্মের কাছে মা দিবস-বাবা দিবসের ধারণাগুলো দিন দিন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সময়ের সাথেই গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠছে এই দিবসগুলো। গত শতাব্দীর প্রথমদিকে বাবা দিবস পালনের সুচনা হলেও ইদানিং অনেকটা জনপ্রিয়তা পেয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। সত্যি বলতে মায়ের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল-এটা বোঝানোর জন্যই এ দিবসটির সুত্রপাত বলা যায়।“১৯০৮ সালের ৫ জুলাই প্রথম ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম এ দিনটি পালিত হয়। আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামে ওয়াশিংটনের এক নারীর মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মাকে নিয়ে অনেক ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়েছিল, তাহলে বাবাদের নিয়ে কিছু করা দরকার। ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি স¤পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর ১৯১০ সালের ১৯ জুন বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন। ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসে ছুটি ঘোষণার জন্য একটি বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে সে সময়কার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন বাবা দিবসে ছুটি ঘোষণা করেন। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়।”(উইকিপিডিয়া)
প্রত্যেকটা শিশুর কাছে, একজন সন্তানের কাছে চিরন্তন আস্থা-নির্ভরতার প্রতীক বাবা। এ দিনকে ঘিরে ব্যতিক্রমী উৎসব পালন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও জনপ্রিয় কালচার হয়ে উঠছে। তবে আমাদের বাংলাদেশে আজো পারিবারিক ব্যাবস্থা বিদ্যমান থাকায় সন্তান ও বাবা-মা একত্রে বসবাস করেন বলে দিবসটি সর্বস্তরে তেমন উন্মাদনা বা আকর্ষন সৃষ্টি করতে পারেনি। তারপরও নানা আয়োজনে আমাদের সামাজিকতায়, বিশেষ করে শহুরে পরিবেশে পালন হয়ে থাকে বাবা দিবস। মানুষ মাত্রই সকলের কাছে বাবা অত্যন্তসম্মান ও গুরুত্বপুর্ণ ব্যাক্তি হিসেবে অসাধারণ আবেগ জড়িয়ে জীবনের বাঁকে-বাঁকে বন্ধু হিসেবে আছেন, থাকবেন। মা-বাবার ¯েœহ-ভালোবাসা সকলেরই কাম্য ,হোক সে বাংলাদেশ বা বিশ্বের যেকোন দেশের সন্তান। বাবা দিবস যেনো শুধু মাত্র একটা বিশেষ দিন বা গন্ডিবদ্ধ কোন আনুষ্ঠানিকতা না হয়। বাবা দিবস হোক সন্তানের আবেগ আর ভালোবসায় রঙিন প্রেমময় আবহে সত্যিকারের উদ্যেশ্য ও লক্ষকে ধারন করার চেতনায় উদ্ভাসিত দিন।
আমার বাবার মতোই আমিও একজন বাবা, আর বাবা হিসেবে এই দিবসের মর্যাদা এবং সম্মান দেখানোতে আমি গর্ববোধ করি। কারন বাবা-মায়ের ¯েœহ-ভালোবাসা আর মায়ার বাঁধন ছাড়া সন্তানের জীবন অপুর্ণ। তাদের জীবনের পুর্ণতার জন্য বাবা-মা অপরিহার্য ভুমিকা পালন করেন।
‘বাবা ছাড়া সয়না আমার একটু দূরে থাকা
বাবা আমার হৃদয় জুড়ে যতœ করে রাখা ।’
বাবা আমার ভালোবাসা ও নির্ভরতা। বিশ্ব বাবা দিবসে সকল গর্বিত বাবাদের প্রতি অগণন ভালোবাসা ও অফুরন্ত শুভ কামনা…। সফল হোক বিশ্ব বাবা দিবস। সকল সন্তানের মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে থাকুক পিতা। থাকুক সম্মানে, ভালোবাসা- নিভরতা আর আদর্শে…।