• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

মেয়াদ শেষ হয়েও তিন বছর অতিবাহিত নির্বাচনের দাবী মোংলা পোর্ট পৌরবাসির

আপডেটঃ : বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮

বাগেরহাট প্রতিনিধি॥
আইনানুসারে নির্বচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতার মেয়াদ ৫বছর থাকলে মোংলা পৌরসভা একটু ব্যতিক্রম।মেয়াদ শেষহবার পর তিন বছর অতিবাহিত হলেও  অজ্ঞাত কারণে নির্বাচন হচ্ছে না মোংলা পোর্ট পৌরসভার। মেয়রের ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হলেও পরে আর নির্বাচন না হওয়ায় ওই মেয়র টানা ৮ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জুলফিকার আলী। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েও এর প্রতিকার পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। এ কারণে থমকে গেছে মোংলা পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকান্ডও । এদিকে আইনী জটিলতার কারণে নির্ধারিত মেয়াদের সাথে আরো তিন বছর শেষ হলেও এ পৌরসভায় নির্বাচন না হওয়ায় সাধারণ পৌরবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের হতাশা আর ক্ষোভ। সাধারণ পৌরবাসী অবিলম্বে আইনী জটিলতা নিরসন করে নির্বাচন ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মেয়র নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচন কমিশনে প্রভাব বিস্তার ও তদ্বিরের মাধ্যমে আইনী জটিলতা সৃষ্টি করে নির্বাচন ঘোষণায় বিলম্বিত করছে। আর এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কতিপয় নেতার নেপথ্যে তাকে  সহযোগীতা করে আসছেন। অবশ্য পৌর বিএনপি নেতা ও মেয়র জুলফিকার আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের মোংলা পৌরসভা নির্বাচনে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী মেয়র পদে নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে মেয়াদ শেষে পুনরায় পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় উচ্চ আদালতে দায়ের হওয়া মামলার প্রেক্ষিতে এ পৌরসভায় যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর তিন বছর অতিবাহিত হলেও নির্বাচন আর হয়নি। ফলে মেয়র ও কাউন্সিলররা টানা প্রায় ৮ বছর ধরে একই পদে রয়ে গেছেন।
সর্বশেষ মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনের বিষয়ে আদালতের কোন আইনগত প্রতিবন্ধকতা না থাকায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশনকে এ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বলা হয়। এরপর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে গত ফেব্রুয়ারী মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগকে পৌরসভার সাধারণ ওয়ার্ডের এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সীমানা বিভক্তিকরণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ না করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা বিধি সম্মত হবে না বলে জানানো হয়। এরপর এ পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে আইনী জটিলতার অজুহাতে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, মেয়রের পদ ধরে রাখতে প্রথমে তার নিজস্ব লোক দিয়ে আদালতে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার মামলা করান বর্তমান মেয়র জুলফিকার আলী। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার তাগাদা দেয়া হলেও নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য মেয়র নির্বাচন কমিশনে নানা মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার ও তদ্বির করতে শুরু করেন। যার কারণে নাশকতার মামলা থাকলেও তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগপত্র দেয়নি পুলিশ। এছাড়া নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠলেও মোংলা পৌরসভায় তা মানা হয়নি। পূর্বের মেয়র মেয়াদ শেষেও দায়িত্ব পালন করছেন।
মোংলা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইজারাদার জালাল আহমেদ বুলবুল বলেন, মোংলা বিএনপি নেতা জুলফিকার আলী নিজের মেয়রের ক্ষমতা ধরে রাখতে কৌশলে তার নিজস্ব লোক দিয়ে প্রথমে আদালতে এবং পরবর্তিতে নির্বাচন কমিশনে প্রভাব ও তদ্বির খাটিয়ে আইনী জটিলতা তৈরী করে নির্বাচন ঝুলিয়ে রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন ও মেয়রের দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দফায় দফায় লিখিতভাবে জানানো হলেও এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। জনগণ ৫ বছরের জন্য মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত করেন। ৫ বছর জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা থাকে। কিন্তু আরও তিন বছরেও নির্বাচন না হওয়ায় জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা নেই। মেয়র যা খুশি তাই করছেন। এজন্য দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, গত ৩ বছর ধরে মোংলায় কাংখিত উন্নয়ন হচ্ছে না। মেয়রের কারণে উন্নয়ন থমকে রয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর মোংলার সাধারণ সম্পাদক মোঃ নূর আলম শেখ বলেন, পৌর নির্বাচন নিয়ে মোংলার জনগণের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে সকল জটিলতা নিরসন করে দ্রুত মোংলা পৌরসভার নির্বাচন দেওয়া উচিৎ। অন্যথায় সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী ও নারী নেত্রী সুমী লীলা বলেন, মেয়র জুলফিকার আলী নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য নির্বাচন ঝুলিয়ে রেখেছেন। তিনি দ্রুত নির্বাচন ঘোষণার দাবি জানান।
সাবেক পৌর কাউন্সিলর সরোয়ার হোসেন বলেন, গত বছর নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা ও মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।বর্তমান পৌর ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান আইনী জটিলতার সৃষ্টি করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নির্বাচন ঝুলিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ করে খুব দ্রুত পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান।
এদিকে মেয়রের বিরুদ্ধে স্থানীদের অভিযোগ, পৌর বিএনপি নেতা জুলফিকার আলী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার একদিন পর যুবলীগের মিছিলে হামলা ও গুলি বর্ষনের ঘটনায় থানায় মামলা হলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ওই মামলায় তার নাম চার্জশীট থেকে বাদ দেয়াতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরে পৌরসভার সামনে ফুলগাছের সাথে  জাতির জনকের ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেষ্টুন খুলে পায়ের তলায় পিষ্ঠ করার ঘটনায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ও অন্যান্য ধারায় জুলফিকারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হলেও এ মামলার তদন্ত প্রায় সোয়া বছর খানেক ধরে চললেও তার এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হচ্ছে না। মামলার বাদি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মোংলা উপজেলা কমান্ডের সহকারী কমান্ডার (অর্থ) মোঃ ই¯্রাফিল হোসেন ইজারাদার অভিযোগ করে বলেন, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে নানা মাধ্যমে ম্যানেজ করে তিনি এখন পর্যন্ত মামলাটির তদন্ত ঝুলিয়ে রেখেছেন। এ মামলার তদন্ত চলছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।এ বিষয়ে পৌর মেয়র জুলফিকার আলী বলেন, তিনি কাউকে দিয়ে মামলা বা নির্বাচন কমিশনে আইনী জটিলতা সৃষ্টি করাননি। শিগগিরই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। পৌর মেয়র বলেন, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগই মিথ্যা, এসব প্রতিপক্ষের অপপ্রচার। তার বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে, সবগুলোই রাজনৈতিক মামলা। নিয়মনীতি মেনেই পৌরসভার যাবতীয় কর্মকান্ড চলে থাকে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ