• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন

পানিতে ডুবিয়া মৃত্যুর উদ্বেগজনক হার

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৮

চকরিয়ার চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী দুর্ঘটনার রেশ কাটিতে না কাটিতেই মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পানিতে ডুবিয়া প্রাণ হারাইয়াছে চারজন স্কুলছাত্র— যাহাদের বয়স ৭ হইতে ১৭ বত্সরের মধ্যে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পানিতে ডুবিয়া মৃত্যু প্রায় নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হইলেও এই মৃত্যুর অভিঘাত যেন খানিকটা বেশি। বিশেষ করিয়া প্রকাশ্য দিবালোকে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রমনা লেকে দুইজন ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু মানিয়া লওয়াটা অত্যন্ত কঠিন বৈকি। লেকটি সুরক্ষিত শুধু নহে, সকালে-সন্ধ্যায় এইখানে স্বাস্থ্যসচেতন বিশিষ্টজনদের ভিড় লাগিয়া থাকে। নিহতরা কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। জানা যায়, তিন বন্ধু ক্লাস ফাঁকি দিয়া রমনা উদ্যানে আসিয়াছিল। একপর্যায়ে নামিয়া পড়িয়াছিল লেকের পানিতে। তিনজনের মধ্যে একজন কিছুটা সাঁতার জানিলেও সাঁতার না জানা বন্ধুকে বাঁচাইতে গিয়া উভয়েরই সলিলসমাধি হইয়াছে। উদ্বেগের বিষয় হইল, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক কেহই জানিতেন না তাহাদের অবস্থান ও গতিবিধি। একই দিনে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় মেঘনা নদীতে গোসল করিতে নামিয়া পানিতে ডুবিয়া প্রাণ হারাইয়াছে ইয়ামিন ও ইয়াসিন নামের অপর দুই স্কুলছাত্র। তাহারা স্থানীয় দুইটি বিদ্যালয়ের যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যাইতেছে যে, পরিবার ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হইতে যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইলে হয়ত এই মর্মান্তিক পরিণতি এড়ানো সম্ভব হইত।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে পানিতে ডুবিয়া শিশু মৃত্যু পরিস্থিতি উদ্বেগজনকই বলিতে হইবে। প্রতিবত্সর প্রায় ১৫ হাজার শিশু পানিতে ডুবিয়া মারা যায়— যাহা মোট শিশু মৃত্যুর ৪৩ শতাংশ। আর প্রতিদিন গড়ে ৪০টি শিশু পানিতে ডুবিয়া মারা যায়। অর্থাত্ প্রতি আধা ঘণ্টায় মারা যায় একটি শিশু! সেভিং লাইভস ফ্রম ড্রনিং প্রজেক্ট (সলিড) ইন বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা  কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠিয়া আসিয়াছে। লক্ষণীয় যে, অধিকাংশ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই অসতর্কতার বিষয়টিই মুখ্য ভূমিকা রাখিতেছে। গবেষণায় দেখা গিয়াছে, বড়রা যখন নানা কাজে ব্যস্ত থাকে, তখনই শিশুরা খেলিতে গিয়া পুকুরে পড়িয়া যায়। দুর্ঘটনার ধরন ভিন্ন হইলেও কিশোর-তরুণদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সম্প্রতি কক্সবাজারের চকরিয়ায় একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন ছাত্রের নদীতে ডুবিয়া মৃত্যু হইতে শুরু করিয়া সর্বশেষ রমনা লেকের দুর্ঘটনায়ও দেখা গিয়াছে যে, কিশোর-তরুণরা উত্তেজনার বশে পরিবার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চোখ এড়াইয়া লেকে কিংবা নদীতে নামিয়া করুণ পরিণতি বরণ করিয়াছে। তাই বড়দের অর্থাত্ পরিবার হইতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই ব্যাপারে কেবল নিজে সজাগ হইলে চলিবে না, নিজ নিজ সন্তান এবং ছাত্র-ছাত্রীদেরও সচেতন করিয়া তুলিতে হইবে। পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হইবে শিশু-কিশোরদের সাঁতার শিখানোর উপর। নয়তো নদীমাতৃক এই দেশে এই ধরনের অনভিপ্রেত মৃত্যু রোধ করা যাইবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ