• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১১ অপরাহ্ন

লোনের নামে অ্যাপের ফাঁদ, সর্বস্বান্ত হাজারও মানুষ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

‘র‌্যাপিড ক্যাশ’ নামে একটি অ্যাপ মোবাইলে ডাউনলোডের পর রেজিস্ট্রেশন করলেই মিলবে লোন। এমন কথার ফাঁদে পড়ে অনেকেই অ্যাপসটি মোবাইলে ডাউনলোড করেন। তবে সেই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করলেই ভুক্তভোগীদের মোবাইলে থাকা সব তথ্য অটো চলে যেত চক্রটির হাতে। পরে তারা সেই তথ্য বাইরে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিতো মোটা অংকের টাকা।

এছাড়া রেজিস্ট্রেশনের পর লোন নিয়ে তারা পড়তেন বিপদে। দুই-একদিন পরই শুরু হতো সুদ আদায়ের তাগিদ। ফোন দিয়ে ঋণের কিস্তি ও চড়া সুদ পরিশোধ করতে বলা হতো। কেউ সেই সুদ দিতে না পারলে তাকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হতো।

এভাবে প্রতারণা করে হাজার হাজার মানুষের কাছে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই প্রতারণার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন দুই চীনা নাগরিক এবং এক বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া।

অবশেষে রাজশাহীর এক ভুক্তভোগী মামলা করলে পুলিশ নড়েচড়ে বসে। এই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কল সেন্টারটির পরিচালক মহিউদ্দিন মাহিসহ ২৬ জনকে আটক করেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। এসময় প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু কম্পিউটার ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।

এটিইউ বলছে, চক্রের মূল হোতা হলেন মাহির নামে এক ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে মূলত এই অ্যাপসে লোন পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা হয়ে আসছিল। এর মাস্টারমাইন্ড ছিলেন দুই চীনা নাগরিক।

বুধবার (১৭ মে) দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিউ) প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন এটিইউর সাইবার ক্রাইম উইং বিভাগের পুলিশ সুপার (এসপি) ফারহানা ইয়াসমিন।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অ্যাপটি মোবাইলে ডাউনলোড করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীর সব কন্টাক্ট নম্বর, গ্যালারির তথ্য, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতো চক্রটি। তারা ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লোন দিতে। কিন্তু এই টাকার বিপরীতে মোটা অংকের সুদ আদায় করত। তারা উত্তরায় অফিস খুলে ভারত ও পাকিস্তানি নাগরিকদের তাদের দেশের ভাষায় কথা বলে আকৃষ্ট করত। এজন্য তারা অফিসে তরুণ ও তরুণীদের রেখে হিন্দি ও উর্দু ভাষায় ভারত-পাকিস্তানের নাগরিকদের সাথে কথা বলাতো। এর জন্য অফিসে থাকা লোকজনকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দিতে চক্রটি। পাশাপাশি কেউ গ্রাহকের কাছে টাকা আদায় করতে পারলে তাদের বোনাস দেওয়া হতো। চক্রটির আরও কল সেন্টার আছে বলে ধারণা করছে এটিইউ।

ফারহানা ইয়াসমিন জানান, চক্রটির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতেন মহিউদ্দিন মাহি। এই মাহি চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর পড়াশোনা করেছেন। তিনি ভালো চীনা ভাষা বলতে পারেন। এই সুযোগকে প্রতারণার কাজে লাগান তিনি। বাংলাদেশে বসে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের একইভাবে লোন দিয়ে প্রতারণা করতেন তারা। পরে মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করত চক্রটি।

ফারহানা ইয়াসমিন আরও জানান, মূলত অ্যাপটিতে রেজিস্ট্রেশন করলেই সব তথ্য চলে যেত চক্রটির হাতে। তাদের পাল্লায় পড়ে অনেকে এখন সর্বসান্ত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ