• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচক :পথ অনেক বাকি

আপডেটঃ : সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০১৭

গত বত্সর বৈশ্বিক ব্যবসা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে এক ধাপ অগ্রসর হইয়াছিল বাংলাদেশ। এইবার বাংলাদেশের ৭ ধাপ অগ্রগতি সাধিত হইয়াছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৭-১৮ অনুযায়ী, ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে ৭ নম্বরের মধ্যে এবার ৩ দশমিক ৯ নম্বর লইয়া ১৩৭টি দেশের মধ্যে ৯৯তম অবস্থানে উঠিয়া আসিয়াছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ৩ দশমিক ৮ নম্বর লইয়া বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৬তম। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ব্যবসায়ীরা জানাইয়াছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুত্ ও বন্দর পরিস্থিতির উন্নয়ন, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস পাইয়াছে কিছুটা। সরকারের সেবা সহজলভ্য ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাসের কথাও ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করিয়াছেন।

 

প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক তৈরি করা হয় ১২টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করিয়া। বিষয়গুলির মধ্যে রহিয়াছে প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পণ্যবাজারের দক্ষতা, শ্রমবাজারের দক্ষতা, প্রযুক্তি, বাজারের আকার, ব্যবসায় উন্নতি ও উদ্ভাবন প্রভৃতি। প্রতিবেদনটিতে দেখা গিয়াছে, ব্যবসা করিবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় প্রতিবন্ধকতা হইল দুর্নীতি। গতবারের প্রতিবেদনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল অবকাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। ২০১৬ সালে দেশের অবকাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নের ফলেই বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে সাত ধাপ আগাইয়াছে বলিয়া মনে করা হইতেছে। তাহা ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসার পরিবেশ লইয়াও জরিপে বেশকিছু ইতিবাচক বিষয় উঠিয়া আসিয়াছে। র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট জরিপে উত্তরদাতাদের ৪২ শতাংশ মনে করিয়াছেন—২০১৬ সালে বিনিয়োগ পরিবেশে ইতিবাচক উন্নয়ন হইয়াছে। তবে কর ব্যবস্থার জটিলতা নিরসনের ব্যাপারে ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা ব্যক্ত করিয়াছেন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদারকি ও নজরদারির দক্ষতা লইয়া ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতার প্রতিক্রিয়া ছিল নেতিবাচক। ৫১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ও নজরদারি ছিল দুর্বল। তাহা ছাড়া, বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) সেবা সুনিশ্চিত নয়—এমন প্রতিক্রিয়া জানাইয়াছেন ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা।

 

মৌলিক চাহিদা, পারদর্শিতা, দক্ষতা আর নূতনত্বের মতো বিষয়গুলিকে দক্ষতা বিচারের মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা হয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে। কেবল বাংলাদেশ নহে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশই এই সূচকে উন্নতি করিয়াছে। সূচকে ভারতের অবস্থান ৪০তম। তাহা ছাড়া ভুটান ১৫ ধাপ আগাইয়া ৮২তম স্থানে, নেপাল ১০ ধাপ আগাইয়া ৮৮তম স্থানে অবস্থানে করিতেছে। বাংলাদেশের মতোই ৭ ধাপ আগাইয়া পাকিস্তান রহিয়াছে ১১৫তম অবস্থানে। কেবল পাকিস্তান ছাড়া প্রতিবেশী দেশসমূহ সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশ হইতে অগ্রগামী। সুতরাং সক্ষমতার সমীহযোগ্য অবস্থানে পৌঁছাইবার জন্য বাংলাদেশকে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হইবে। এইক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যেই সকল বিষয়ের উপর নেতিবাচক মতামত ব্যক্ত করিয়াছেন, তাহা গুরুত্বের সহিত বিবেচনায় নিয়া কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। দেখা গিয়াছে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য আইসিটি অবকাঠামো এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ছিল অন্যতম বড় বাধা। সুতরাং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করিতে হইলে দেশে ব্যবসায় প্রযুক্তিনির্ভরতা বৃদ্ধি করিবার বিকল্প নাই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ