যুবসমাজ ধ্বংসের সবচেয়ে বড় কারণ নেশা। ধ্বংসের ফলাফল দেখতে পাচ্ছি আমরা খুব সামনে থেকে। উপর্যুপরি দু’দিনে শ্রীপুরের দুটি ঘটনা আরও বেশি ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেশার টাকার জন্য আত্মহত্যা করেছে এক যুবক। ২৩ বছর বয়সের এই যুবক শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় ভাড়া বাসায় থাকত। প্রায়ই বাবার সঙ্গে ছেলেটির নেশার টাকার ব্যাপারে ঝগড়া হতো। ওইদিন বাড়িতে ছেলেটিকে রেখে বাবা বাইরে যান এবং এসে দেখেন গাছে ছেলের ঝুলন্ত লাশ!
এরপরের ঘটনা, নেশার টাকার জন্য সন্তানকে বিক্রি করে দেয় এক বাবা। এ ঘটনাও ঘটে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামে। এক মাস আঠারো দিনের শিশুটিকে নেশার টাকার জন্য বাবা বিক্রি করে নিঃসন্তান দ¤পতির কাছ থেকে ২৮ হাজার টাকা নেয়!
গত কয়েক বছরে অপহরণ বেড়েছে, আত্মহত্যা বেড়েছে, যৌতুকের নিদারুণ কশাঘাতের চিহ্নও কম নয়, এমনকি নেশার টাকার জন্য কেউ কেউ কয়েকটি বিয়ে পর্যন্ত করে স্ত্রীদের চাকরি করাচ্ছে। আইনের ক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও কিছুদিন আগে শ্রীপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ইয়াবা পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে একজন ছাত্রকে গ্রেফতার করার। এ ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। একদিকে বিপুলসংখ্যক মাদক ব্যবসায়ী, অন্যদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সত্যিই খুব হতাশার মধ্যে ফেলে দেয় আমাদের। যারা সত্যিকারের মাদক ব্যবসায়ী, তাদের আইনের আওতায় আনতে গেলেও দেখা যায় কয়েকদিন পরই তারা জামিনে বের হয়ে আসছে এবং বের হয়ে এসে আবার মাদক ব্যবসায় জড়িত হচ্ছে। আত্মহত্যা, শিশুপুত্র বিক্রি, স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য চাপ, ধর্ষণ- সবকিছুর সঙ্গে নেশা নামক ভয়াবহ একটি ব্যাপারের স¤পৃক্ততা রয়েছে।
নেশার গ্রাস থেকে বাঁচাতে হবে সমাজকে। স্কুল-কলেজপড়–য়া ছাত্রছাত্রীদের রাতে অভিভাবক ছাড়া বাইরে থাকার ব্যাপারে কঠোর হওয়া উচিত, বিশেষ করে গাজীপুরের কিছু অঞ্চলে। আঠারো বছরের নিচে মোটরসাইকেল চালানোর ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হোক। স্কুল ও কলেজগুলোতে তল্লাশি করে ঢোকানোর নিয়ম চালু করা যেতে পারে। বিশেষ করে গ্রামে স্কুল-টাইমে কেউ যাতে বাইরে না যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনিকভাবে কিছু জায়গা চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় চেকপোস্ট বসালেও ভালো কাজ হতে পারে বলে মনে করি। মাদক বন্ধ করতে হলে মাদকের বিস্তার বন্ধ করতেই হবে। পাশাপাশি যে মাদক নেয় তাকে বোঝাতে হবে, সে সমাজে ঘৃণিত মানুষ।
একেকটি ঘটনা একেকটি উদাহরণ। যদি সঠিক ব্যবস্থা না নেয়া যায় তবে এই ঘটনাগুলোই অপরাধীরা দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে পুনরায় অপরাধ সংঘটনে আরও বেশি উগ্র হয়ে উঠতে পারে। পরিবার থেকেও যথেষ্ট সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। যদি সন্তানকে কথা না শোনাতে পারেন, তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও নেশা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে হলে নেশাকে না বলা শেখাতেই হবে।
সাঈদ চৌধুরী : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর