• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ অপরাহ্ন

মিয়ানমারের মন্ত্রীর আশ্বাস

আপডেটঃ : বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দফতরের মন্ত্রী খিও টিন্ট সোয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে পালিয়া আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার যে আশ্বাস দিয়েছেন তা ইতিবাচক। এর পূর্ণ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ দেখতে চাই আমরা। শুধু সাম্প্রতিক সময়ে আসা রোহিঙ্গাদের নয়, ইতিপূর্বে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনেও নিতে হবে পদক্ষেপ, যদিও আগে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের মন্ত্রী কোনো আশ্বাস দেননি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরকালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় দু’দেশ রোহিঙ্গাদের কীভাবে ফেরত পাঠানো হবে তা নিয়ে কাজ করতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে এবং জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপের মুখেই মিয়ানমারের মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে তিনি যে আশ্বাস দিয়েছেন, তা কতখানি আন্তরিক সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। সম্প্রতি অং সান সু চি বলেছেন, নব্বইয়ের দশকে সম্পাদিত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে থাকা শরণার্থীদের মিয়ানমার যাচাই বা সত্যাসত্য নির্ধারণের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত। সু চির দফতরের মন্ত্রী হয়তো তার কথাটিই পুনরাবৃত্তি করতে চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে কীভাবে যাচাই করা হবে এবং তা কতটা সম্ভবপর হবে তা নিশ্চিত নয়। তাছাড়া ইতিপূর্বে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভাগ্যে কী ঘটবে সেটিও এক প্রশ্ন বটে। ভুলে গেলে চলবে না, নব্বইয়ের দশকে করা প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় খুব বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। মিয়ানমারের মন্ত্রীর বর্তমান আশ্বাসের পরিণতি সে রকম হয় কিনা সেটিও ভেবে দেখার বিষয় বৈকি!

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে মনে রাখতে হবে, শুধু এতেই আমাদের আশ্বস্ত থাকার সুযোগ নেই। মিয়ানমারের মন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। এর প্রতি মিয়ানমার কতটা সাড়া দেয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের জন্য অব্যাহত রাখতে হবে কূটনৈতিক তৎপরতা। বিশেষ করে এ ইস্যুতে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সমর্থন আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দেশগুলো যাতে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত স্বার্থের চেয়ে এক্ষেত্রে নৈতিক, মানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনগত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়, সে লক্ষ্যে জোর প্রয়াস চালাতে হবে আমাদের। এই বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশ ভালো। তা সত্ত্বেও শুধু বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে তারা মিয়ানমারের জাতিগত নিধন অভিযানকে তথা একটি অন্যায় আচরণকে সমর্থন দিয়ে যাবে কিংবা এ ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করবে, এমনটি আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। আমরা আশা করব, আমাদের কূটনীতিকরা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের আচরণ এবং এর ফলে সৃষ্ট বাংলাদেশের ঝুঁকিগুলো বৃহৎ শক্তিগুলোর কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হবেন, যাতে তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের তাগিদ পায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ