সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল চলছেই। প্রতিদিনই দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। সন্দেহ নেই আধুনিক যুগ আমাদের গতি দিয়েছে। ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর থেকে ভূ-উপরিতল, নদী-সাগর অথবা আকাশ সবখানেই গতিময় চলাফেরা আজ। দেশের আনাচে-কানাচে নির্মিত নতুন নতুন রাস্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটরযান। সেই সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা। প্রয়োজনের তাগিদেই আমরা নিত্যদিন যাতায়াত করছি এখানে-ওখানে।
মিডিয়ার কল্যাণে আমরা মুহূর্তেই জানতে পারছি দুর্ঘটনার খবর। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে নিহতের সংখ্যা দেখে এবং এর কয়েকগুণ বেশি আহতের সংবাদে। মৃতের স্বজনরা দৌড়ে যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে, তাদের মাতম আর আর্তনাদে কেঁপে উঠছে আকাশ-বাতাস। আমরা বিবেকবানরা আঁতকে উঠছি অকাল মৃত্যু-পঙ্গুর বহুমাত্রিক চিত্রে; হরহামেশাই দেখছি দুর্ঘটনার দানবীয় ধ্বংসচিত্র। ঘটনাস্থলে আহত মানুষের কাতরানো-চিৎকার আমাদের দায়বদ্ধ করে পাশে দাঁড়াতে ও সাহায্য করতে।
পরিবারকে ঝুঁকিহীন রাখা যেমন অভিভাবকের দায়িত্ব, তেমনি দেশকে ঝুঁকিহীন রাখা সরকারের দায়িত্ব। দেশে ঝুঁকিপূর্ণ-অনিরাপদ সড়ক আছে বলেই মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে নতুবা পঙ্গুত্ব বরণ করছে। সড়ক সংস্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার পরও ভাঙা সড়কের গর্ত বালু দ্বারা ভর্তি করা হয়। বৃষ্টির ফলে সেসব বালু সরে গিয়ে সড়ক তার পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির দেয়া তথ্যানুযায়ী জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৮৭৩ জন। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫০০ জন। দুর্ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৪১৯টি। নিহতদের মধ্যে ৩৪৪ নারী ও ৩৮১ শিশু রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক, সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
কেন ঘটছে দুর্ঘটনা? সড়কের বেহাল দশা নাকি গাড়ি চালকদের নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালনা এ জন্য বেশি দায়ী? একাধিক কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি, অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণগুলো হল : ক. নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাস চালানো, খ. ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালক, গ. হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, ঘ. অপ্রাপ্তবয়স্ক ড্রাইভার, ঙ. নেশা করে গাড়ি চালানো, চ. ট্রাফিক আইন না মেনে চলা, ছ. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি ড্রাইভ করা, জ. চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানো, ঝ. পর্যাপ্ত পরিমাণ রেইস ব্রেকার না থাকা, ঞ. ড্রাইভিং সিটে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলা, ট. রাস্তায় বাজার বসিয়ে চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো ইত্যাদি। তাছাড়া প্রতিটি উপজেলা সদরে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণহীন। যানবাহন চলাচলে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ম-কানুন। তাই দুর্ঘটনা বাড়ছে।
দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা এখনও দুর্বল। নিরন্তর চেষ্টা ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে দুর্ঘটনাজনিত প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা সম্ভব। যোগাযোগ মন্ত্রীর কাছে আবেদন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুন।
লোকমান হেকিম : চিকিৎসক