গতিশীল বাঙালি সমাজের প্রবক্তা ছিলেন। বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় সংকট নিরসনে তার বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান কখনো বিস্মৃত হবার নয়। পুঁথি সংগ্রহ, সম্পাদনা ও গবেষণার মাধ্যমে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ বাংলা সাহিত্যের ঐতিহাসিক ধারাক্রমকে পরিপূর্ণতা দিয়েছেন। গতকাল বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান গবেষক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ১৪৬তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সভায় ‘সাহিত্যবিশারদের সাধনা’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন মাতৃভাষাকে জাতীয় ভাষায় রূপান্তর করতে না পারলে জাতীয়তার পরিচয় পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তিনি ঐতিহ্যের অন্ধ অনুবর্তনের পরিবর্তে তার সমকালীন রূপান্তরে আস্থা রাখতেন। তিনি বলেন, সাহিত্যবিশারদ জন্মলগ্ন আধুনিকতার চর্চা করতেন, তাই লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি ছিল তার বিশেষ আগ্রহ। স্থবির-জঙ্গম কুসংস্কারের অচলায়তন ভেঙে গতিশীল বাঙালি সমাজ বিনির্মাণে সাহিত্যবিশারদের ঐতিহাসিক ভূমিকা আমরা চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো।
অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের অবদানকে যদি এককথায় মূল্যায়ন করতে হয়, তবে বলতে হবে, বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা এবং এ বিষয়ে তার মনে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালনকারীদের একজন তিনি। মুসলিম রচিত পুঁথি সংগ্রহ ও গবেষণার মাধ্যমে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ এ দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে লেখা তার প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং সভা-সম্মেলন-সংবর্ধনায় দেওয়া লিখিত অভিভাষণ আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের যে উদার, অসাম্প্রদায়িক, বিশ্লেষণী ও বাস্তববাদী মনোভঙ্গির পরিচয় দেয়, সমকালে তার তুল্য উদাহরণ বেশি পাওয়া যায় না। এক বক্তা বলেন, কলকাতা বা ঢাকা থেকে বহুদূরে এক নিভৃত পল্লীতে বসে একাকী যে সাধনা আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ করে গেছেন তা আমাদের সাহিত্যিক ও সামাজিক ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
শামসুজ্জামান খান বলেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের অবদান নানা দিক থেকে নবমূল্যায়নের দাবি রাখে। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাংলা সাহিত্যের সামগ্রিক ইতিহাস নির্মাণে সাহিত্যবিশারদের কাছে আমাদের ফিরে আসতেই হবে। বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় সংকট নিরসনে তার বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান কখনো বিস্মৃত হবার নয়।