• শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন

হরতালের প্রভাব বেনাপোলে, অর্থনৈতিক ক্ষতিতে ব্যবসায়ীরা,

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

একের পর এক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে, দূরপাল্লার রুটে পণ্য পরিবহণে ট্রাক সংকটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও কিছু ট্রাক মিললেও প্রতি ট্রিপে ভাড়া বেড়েছে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে স্বাভাবিক পণ্য সরবরাহে বিঘ্নিত হয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশের শিল্প কলকারখানার উৎপাদনও চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।

ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পাশাপাশি এ অঞ্চলের রাস্তাগুলো প্রশস্ত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এসেছে বেনাপোল বন্দরে। যার কারণে রাজধানী ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি-রফতানিতে বেনাপোলকে বেছে নিয়েছেন। এছাড়াও এই বন্দর দিয়ে রেলপথ ব্যবহার করেও ভারতীয় পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্যের মধ্যে বড় একটি অংশ শিল্পকলকারখানা স্থাপনের যন্ত্রাংশ, উৎপাদন সামগ্রীর কাঁচামাল, কেমিকেল, অক্সিজেন ও খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য। তবে বর্তমানে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের নামে ফের দেশজুড়ে সহিংসতায় বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বেনাপোল বন্দরে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে পণ্য আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও আগুন সন্ত্রাস ও নাশকতার ভয়ে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও ট্রাক মালিকরা ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পরিবহন করতে অনিচ্ছা দেখাচ্ছেন। এতে আমদানি ও রফতানি পণ্য পরিবহণে ট্রাক সংকটের মুখে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। তবে,কিছু ট্রাক মালিক ও চালকরা এই সংকট কাজে লাগিয়ে নানা অযুহাতে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা ভাড়া বেশি নিয়ে গন্তব্যে যেতে রাজি হচ্ছেন।

আমদানিকারকরা জানান, বেনাপোল থেকে ঢাকা ট্রাক ভাড়া ১৮ হাজার টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে ২৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে চট্রগ্রাম রুটের ভাড়া ৮ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ায় সরবরাহ যেমন কমেছে তেমনি সময় মত কাঁচামাল না পৌঁছানোয় শিল্পকলকারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তেমনি, ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকায় বেনাপোল বন্দর ঘিরে হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মধ্যেও দুশ্চিন্তা তৈরি হচ্ছে। দলমত নির্বিশেষে অধিকাংশদের মধ্যেই হরতাল-অবরোধকে দেশের জন্য বিষফোঁড়া মনে করা হচ্ছে। এমনকি, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হরতালের নামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এড়িয়ে চলার জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে কর্মকাণ্ড পরিচালনার দাবিও তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।

ভারতীয় পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসা ট্রাক চালকেরা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমদানি পণ্য বন্দরে নিয়ে এসে তাদের অনেকে দুই দিন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে এপারে ট্রাক সংকটের কারণে ট্রাক থেকে পণ্য আনলোড হচ্ছেনা। এতে আমদানি পণ্যের জট বেড়েছে। এমনকি ভারতীয় ট্রাক চালকেরাও টানা আটকে থাকার ভয়ে এপারে পণ্য আনতে অনাগ্রহী হচ্ছেন।

বেনাপোল ট্রাক ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, ভারত থেকে পণ্য আমদানি স্বাভাবিক আছে। বেনাপোল বন্দরে কোন হরতাল নেই। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক ঘটনায় চাহিদা মত ট্রাক বন্দরে আসছে না। এতে পণ্য খালাসের পরিমাণ কমেছে। স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে প্রায় ৪৫০ ট্রাক পণ্য খালাস হলেও ট্রাক সংকটে এখন পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২০০ ট্রাকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতিতে পড়বে।

 

আমদানিকারক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বেশি ভাড়া দিয়েও ট্রাক না মেলায় ক্ষতির মুখে পড়েছি। ঢাকার ভাড়া ৫ হাজার ও চট্রগ্রাম রুটে ৮ হাজার পর্যন্ত বেড়েছে। এতে আমদানি খরচ বাড়ছে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, হরতাল-অবরোধে কাস্টমস হাউসের কাজে প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে বন্দরে ট্রাক সংকটে জরুরী আমদানি পণ্য সব গন্তব্যে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। হরতাল, অবরোধ এড়িয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ