• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ন

পোলট্রি বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জরুরি

আপডেটঃ : রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭

দেশে হাঁস-মুরগির খামার বা পোলট্রি শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটিতেছে। লাভজনক ও প্রচুর চাহিদা থাকিবার কারণে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের নিকট এই শিল্পের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান হইতে জানা যায়, এই শিল্পের বত্সরে ১৫ হইতে ২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ঘটিতেছে। গ্রাম ও শহর সর্বত্রই এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। কেহ বাড়ির ছাদে, কেহ-বা বাড়ির পার্শ্বে গড়িয়া তুলিতেছেন ছোট ছোট পোলট্রি ফার্ম। তাহা ছাড়া বৃহত্ পরিসরেও বহু খামার গড়িয়া উঠিতেছে। প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক  উন্নয়নে  এই খামারগুলি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখিতেছে। কিন্তু সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে এই বর্জ্য ফেলা হইতেছে খামারের পার্শ্বের কোনো উন্মুক্ত স্থানে, নদীতে, জলাশয়ে কিংবা রাস্তার পার্শ্বে। ইহাতে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকট হইতেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে যে, অপরিশোধিত এইসকল পোলট্রি বর্জ্য শাকসবজি কিংবা মেস্যর খামারে ব্যবহার করাও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

 

অপরিশোধিত পোলট্রি বর্জ্য ব্যবহার করা খামারের সবজিতে এবং পুকুরের পানি ও মাটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের গবেষকবৃন্দ দুইটি রোগের জীবাণু শনাক্ত করিয়াছেন। সালমোনেল্ল­া ও ই-কোলাই নামের এই জীবাণু-দুইটি মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের মতে, সালমোনেল্ল­ার কারণে টাইফয়েড এবং ই-কোলাইয়ের কারণে ডায়রিয়া হয়। তাহা ছাড়া ফুড পয়জনিংসহ নানা ধরনের বিষক্রিয়াতে আক্রান্ত হইবারও প্রবল আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করিয়া সালাদে ব্যবহূত কাঁচা সবজিগুলিই এই ক্ষেত্রে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলিয়া প্রতীয়মান হয়। তবে এই ক্ষেত্রে গাজর, শসা ও কাঁচা মরিচের মতো সবজিগুলি ভালো করিয়া ধুইয়া খাওয়াটা একটি সাময়িক বিকল্প হইতে পারে। কিন্তু এই ধরনের জীবাণু শুধু পানি দিয়ে ধৌত করা কেন, এমনকি আগুনের তাপে সিদ্ধ করা হইলেও সংক্রমণ ক্ষমতা হারায় না। এই ক্ষেত্রে ক্ষেত-খামারে সার বা মাছের খাদ্য হিসাবে অপরিশোধিত পোলট্রি বর্জ্য বর্জন করাই স্থায়ী সমাধান বলিয়া মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ।

 

পোলট্রি বর্জ্য মূল্যবান সম্পদ। পরিশোধন করিলে তাহা মাছের খাবার ও কৃষির জন্য উপযুক্ত সার হইতে পারে। তাহা ছাড়া পরিশোধিত বর্জ্যে উত্পাদিত বায়োগ্যাস রান্না-বান্নার কাজেও ব্যবহার করা যাইতে পারে। এই লক্ষ্যে সকল পর্যায়ের খামারিদের সর্বাগ্রে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, পোলট্রি বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে খামারি ও সর্বসাধারণকে সচেতন করাও জরুরি। অনেকেই বাধ্যবাধকতা না থাকিবার কারণে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে এড়াইয়া যান। তাই জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় এই ব্যাপারে আইনগত বাধ্যবাধকতা আরোপের বিষয়টি সমান গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ