দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পুলিশ সদস্যদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া চাল ও গমের মান লইয়া প্রশ্ন তোলা হইয়াছে। পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো এই-সংক্রান্ত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বলিয়াছে, কঠোর পরিশ্রম শেষে নিম্নমানের এইসব খাবারের কারণে পুলিশ সদস্যদের মনোবলের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হইতেছে।
ব্রাজিল হইতে ২০১৫ সালে যখন দুই লক্ষ টন পচা ও পোকায় খাওয়া গম আমদানি করা হয়, তখন সেই গমও ভর্তুকি মূল্যে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সরবরাহ করা হইয়াছিল। সেই সময়েও পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তর নিম্নমানের ওই গম গ্রহণে আপত্তি জানায়। সম্প্রতি সরকারি খাদ্যগুদাম হইতে ভর্তুকি-মূল্যে চাল ও গম সংগ্রহের পর তাহা পুলিশের সকল ইউনিটের সদস্যসহ এনএসআই, এসএসএফ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের রেশনগ্রহীতাদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। এইসকল ইউনিটসহ পুলিশের মোট ১২২টি ইউনিট হইতে প্রাপ্ত মতামতে জানা যায়, ওই চাল ও গম অতি নিম্নমানের। চালের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যরা আরো জানাইয়াছেন যে, সরকারি খাদ্যগুদাম হইতে সরবরাহ করা চাল লালচে বর্ণের ও মোটা। এই চালে অধিকাংশ সময়ই পোকা পাওয়া যায়। কখনো কখনো ফাঙ্গাস, ময়লা ও কাঁকর থাকে। চালে মরা চালের পরিমাণও থাকে বেশি। চালের পাশাপাশি অভিযোগ রহিয়াছে গম লইয়াও। সরবরাহকৃত গমে অধিকাংশ সময় পোকা, প্রচুর ময়লা ও ছত্রাক থাকে। ময়লা ও কাঁকরযুক্ত গম ভাঙানোর পর ভ্যাপসা গন্ধ পাওয়া যায়। ওই গমের আটা দিয়া রুটি তৈরির পর তাহা কালো বর্ণ ধারণ করে এবং ইহা খাইতেও বিস্বাদ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ খাদ্য অধিদপ্তর সরকারি খাদ্যগুদাম হইতে গত সেপ্টেম্বরে নমুনাস্বরূপ চাল ও গম উত্তোলন করিয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানায়, বিএসটিআই অনুমোদিত মানদণ্ড অনুযায়ী ওইসব চাল গ্রেড-৩ ও গম গ্রেড-২-এর অন্তর্ভুক্ত।
জানা যায়, খাদ্যগুদামের চাল ও গমের গুণগত মান গুদামে থাকা অবস্থাতেই বহুক্ষেত্রে নষ্ট হইয়া যায়। রেশন সরবরাহের ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি প্রথা অনুসরণ করিয়া থাকে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। এই ওয়ারেন্টি প্রথার অর্থ হইল—গুদামে যে খাদ্যশস্য আগে আসিবে, তাহা আগে সরবরাহ করা হইবে। ইহাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাত-আট মাস পূর্বের চাল ও গম পুলিশকে রেশন হিসাবে গ্রহণ করিতে হয়। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহে চিঠি চালাচালি হইয়াছে বটে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয় নাই। ইহার আশু ও স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। মনে রাখিতে হইবে, পুলিশ সদস্যদের বহুক্ষেত্রেই দৈনিক ১৬-১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত ডিউটি করিতে হয়। কাজের পরিধি বিবেচনায় তাহাদের জন্য যথাযথ মানের খাবার সরবরাহ করাটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বারংবার ইহার ব্যত্যয় কোনো অজুহাতেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না।