• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন

অবিশ্বাস অনিশ্চয়তায় জাপা,

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার অনিশ্চয়তা, অবিশ্বাসের দোলাচলে জাতীয় পার্টি। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকবে না নির্বাচনে থাকবে- এ নিয়ে শঙ্কা খোদ নেতাকর্মীদের মাঝেই। সরকারের দীর্ঘদিনের মিত্র এই দলটি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কিনা- এমন শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও। সর্বশেষ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনির্ধারিত আলোচনায় জাতীয় পার্টি নিয়ে মন্তব্য করেন। দলটিকে বিশ্বাস করা যায় না, তারা নির্বাচন থেকে সরেও যেতে পারে- এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ডেমোক্রেসিতে অনেক কিছুই সম্ভব।

গত দুই দিনে আওয়ামী লীগের তরফে এমন বক্তব্য আসার পর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মাঝেও নতুন করে হতাশা, অবিশ্বাস ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দলটির মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের অনেকে মনে করেছিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে তারা নির্বাচন করতে পারবেন। এতে তাদের জয় সহজ হবে। কিন্তু আসন ভাগাভাগির আলোচনা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া জয়ী হওয়ার সুযোগ নেই বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এনিয়ে দেন-দরবার চলার মধ্যেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে নেতিবাচক মন্তব্য আসায় অনেকে মনে করছেন জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি আটকে যেতে পারে। এমনটি হলে জাতীয় পার্টি হয়তো নির্বাচন থেকে সরেও যেতে পারে। তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকালও জানিয়েছেন ভোটে থাকার জন্যই তার দল নির্বাচনে এসেছে। যদিও পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের দৃশ্যপটে নেই বেশ কিছুদিন ধরে। কোনো কর্মসূচিতেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। দলের নেতাকর্মীরাও অভিযোগ করেছেন চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ বা সাক্ষাৎ করতে পারছেন না।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শঙ্কা প্রকাশ ও নেতিবাচক বক্তব্য আসার পর গতকাল জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে মানবজমিনের। তাদের অনেকের কণ্ঠে ভিন্ন সুর দেখা গেছে। তারা বলছেন, ভোটে জিততে না পারলে নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই।

বরিশাল থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এক প্রার্থী বলেন, আমরা সারাজীবন জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে আসলাম। আসন সমঝোতা হলে কোনো সময়েই আমার নামটা আসে না। তাহলে এই দেখানো নির্বাচনে যাওয়ার প্রয়োজনটা কী? এবিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান একজন সংসদ সদস্য বলেন, ঝামেলাটা বেঁধেছে আসন সংখ্যা নিয়ে। আমাদের যেহেতু দেন-দরবার শুরু হয়েছিল ৭০ আসন দিয়ে। আমরা বলেছিলাম ঢাকার দু’টি আসনসহ অন্তত ৫০টি আসন দেয়া হোক। কিন্তু তারা আমাদের দিতে চেয়েছিলেন অনেক কম। এরপর আমরা ৩৫টিতে নেমে আসি। তারা ২৮টি পর্যন্ত ইতিবাচক ছিলেন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে দিতে হবে এই দাবি জানানোর নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন তারা।

দলটির একজন কো-চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক কঠিন সমীকরণ চলছে। গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে আমাদের কী লাভ হয়েছে? এখন একবার নির্বাচনে না গেলে আমি মনে করি দলের জন্য আরও ভালো হবে। গৃহপালিত বিরোধী দল থেকে রাজনীতির মাঠে কতোই আর উন্নতি করা যায়। এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়ে অবিশ্বাস করছেন। আর অবিশ্বাসের খবরেই আমরা বিচলিত হয়ে পড়ছি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে দলটির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সমঝোতার বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। মহাসচিব যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই আমরা মেনে নেব। ওনার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। দলীয় সিদ্ধান্ত হলে নির্বাচন থেকেও সরে আসতে প্রস্তুত আছি।

সর্বশেষ জাতীয় পার্টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এ বিষয়ে গতকাল পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন এবিষয়ে আমার কথা বলার সুযোগ নাই। আমাদের বিশ্বাস করেন কিনা, করবেন কিনা- এটা ওনার বিষয়। আমি শুধু বলবো, জাতীয় পার্টি নির্বাচন করার জন্যই আসছে। নির্বাচন থেকে চলে যাওয়ার জন্য আসে নাই। আমরা একটা জিনিসই চাইছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ। বিশ্বাস, অবিশ্বাসের বিষয় না। ভোট সুষ্ঠু হলে আমরা ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখছি। সমঝোতার বিষয় জানি না। আমরা শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা বৈঠক করেছি সামনেও করবো।

দলের চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, পশ্চিমারা যা চায় বাংলাদেশের মানুষও তা চায়। যদিও আমরা চাই না বাইরের কেউ কথা বলুক। কিন্তু তাদের কথা বলার সুযোগ আমরাই করে দিয়েছি। কিন্তু তাদের বক্তব্যটা সঠিক। আমরাও চাই যাতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়। এই দাবির কারণে নির্বাচন কমিশন ও শাসক দলের সঙ্গে বৈঠক করছি।
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের বিষয়ে তিনি বলেন, তার জন্য মনোনয়ন ফরম রেখেছিলাম কিন্তু তিনি নেননি। তিনি নির্বাচনে এলে ভালো হতো।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রওশন এরশাদের বৈঠক: ওদিকে সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি না করতে রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, রওশনের ছেলে রাহগীর আল মাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ), বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশিদ ও সাদ এরশাদের স্ত্রী এসময় উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে ফোন করেন রওশন এরশাদ। এরপরই প্রধানমন্ত্রী দুপুর ১২টায় তাকে সময় দেন। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী একাই উপস্থিত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত হন। বৈঠকে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠন করতে পারলে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে যথাযথ মূল্যায়ন করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আপনারা আগেও আমাদের সঙ্গে ছিলেন, এখনো আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। নির্বাচনী ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। এই ট্রেনে আপনাদের উঠার আর কোনো সুযোগ নেই। তবে জনগণের ভোটে যদি আওয়ামী লীগ আবার বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে তাহলে আপনাদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করা হবে।

ওদিকে রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোন ধরনের জোট না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, জিএম কাদেররা ২৮৭টি আসনে দলীয় নেতাদের মনোনয়ন দিয়েছেন। এখন যদি আসন ভাগাভাগি করে ৩০ বা ৪০টি আসনে সমঝোতা হয় তাহলে জাতীয় পার্টির বাকি প্রার্থীদের অপরাধ কোথায়। মুখ চিনে হেভিওয়েটদের আসনে ছাড় দেয়া হলে যারা এতদিন জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে জনগণের সঙ্গে ছিল তারা বঞ্চিত হবেন।
বৈঠকে উপস্থিত বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় আমরা বলেছি, নির্বাচনে রওশন এরশাদ না যাওয়ার মানে এই না যে, এই নির্বাচনকে তিনি সমর্থন করেন না। নির্বাচন হয়ে যাবে-এটাকে আমরা সমর্থন করি। আমরা বলতে চেয়েছি- জিএম কাদের একদিকে বলে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা আরেক দিক দিয়ে জোট করতে চান। এটা তাহলে দ্বৈত কথা হলো। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক।

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দিয়েছেন- এমন প্রশ্নে কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনের ট্রেন ছেড়ে গেছে। এই ট্রেনে উঠার আর কোনো সুযোগ নেই। তবে আপনারা অতীতে আমাদের সঙ্গে ছিলেন, এখনো আছেন, ভবিষ্যতেও আপনারা আমাদের সঙ্গে সুখে-দুঃখে থাকবেন।

এদিকে গণভবন থেকে বেরিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।

সাক্ষাৎ শেষে গণভবন গেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, তিনি (রওশন) হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পত্নী, তিনি দল পরিচালনা করেছেন, তিনি জেল খেটেছেন আড়াই বছর। সাদ (রওশনের ছেলে) আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, সেও আড়াই বছর জেলে ছিল। ছোটবেলা থেকে জেলে ছিল। এমপি হওয়ার অধিকার তো এরশাদ সাহেবের সন্তানের রয়েছে। রাঙ্গা বলেন, তিনি (জিএম কাদের) তো চাচা হিসেবে তাকে (সাদ) ভাতিজাই মনে করেন। সুতরাং সেই আসনে তিনি নিজে দাঁড়িয়েছেন। এটা তো একটা নেতৃত্বসুলভ আচরণ হলো না। তিনি আত্মীয়ের সঙ্গে সমস্যা করলেন। তার ভাবির সম্পর্কেও তিনি কুমন্তব্য করেন। তার মহাসচিব (মুজিবুল হক চুন্নু), তিনিও করেন। আমার সম্পর্কেও অনেক গীবত তারা করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ