• শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর জলাবদ্ধতা ও বিপর্যস্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা

আপডেটঃ : সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭

গত কয়েক দিন ধরিয়া সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল রাজধানী ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা। টানা বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট পানিতে সয়লাব হইয়া যায়। ইহাতে নাগরিকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাইতে হয়। বিপর্যস্ত হইয়া পড়ে নগরজীবন। মোটর সাইকেল, সিএনজিসহ নানা ছোট-খাট যানবাহন তো বটে, কোনো কোনো রাস্তায় কিছু সময়ের জন্য বাস চলাচলও বন্ধ অথবা সীমিত হইয়া পড়ে। প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহনও পথিমধ্যে হইয়া পড়ে বিকল ও অকেজো। মহানগরে এই জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ নিঃসন্দেহে বৃষ্টিপাতের আধিক্য। সেই গ্রীষ্মকাল হইতে শুরু করিয়া বর্ষাকাল, শরত্কাল আর এখন হেমন্তকালেও বর্ষণ বন্ধ হইতেছে না। বড় দাগে জলাবদ্ধতার আরেকটি কারণ—বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য নালা-নর্দমা ও ম্যানহোলগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। বিশেষত বিশেষজ্ঞরা এবারের এই জলাবদ্ধতার জন্য নগরীর ক্যাচপিটগুলির অচলাবস্থাকেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে বিবেচনা করিতেছেন।  ক্যাচপিটের সাহায্যে বৃষ্টির পানি গভীর নর্দমায় পৌঁছায়। ওয়াসার ৩৫০ কিলোমিটার গভীর নর্দমা লাইনের সহিত এই ক্যাচপিটগুলি সংযুক্ত। কিন্তু রাজধানীতে ঢাকা ওয়াসার আড়াই হাজার ক্যাচপিট থাকিলেও বর্তমানে প্রায় এক হাজারই বন্ধ হইয়া আছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেও অনেক এলাকায় দীর্ঘ সময় জুড়িয়া দেখা দেয় দুর্বিষহ জলাবদ্ধতা। ইহার প্রভাবে এবার আন্তঃজেলা বাস ও ট্রেন চলাচলও বিঘ্নিত হইয়াছে।

 

জানা যায়, আসাদ গেট হইতে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর পর্যন্ত রাস্তার ধারে ২৮টি ক্যাচপিটের মধ্যে ২২টিই বন্ধ। একই অবস্থা বিরাজমান ফকিরাপুল, পুরানা পল্টন, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, তেজগাঁও, মহাখালী, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ মিরপুর-১০, গাবতলী প্রভৃতি এলাকায়। ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগের মতে, বিভিন্ন সময়ে সড়ক, ফুটপাত এবং নর্দমার নির্মাণ ও সংস্কার কাজের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে এই ক্যাচপিটগুলি। কিন্তু পরে তাহা সংস্কারে মনোযোগ দেওয়া হয় নাই। বরং এখানে চরম অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয়ই ফুটিয়া উঠিয়াছে। নির্মাণ বা সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের অনেকেরই এই ব্যাপারে কোনো ধারণা নাই। ক্যাচপিট কী ও কেন তাহা না বুঝিবার কারণেও অনেকগুলি চাপা পড়িয়া গিয়াছে মাটির নিচে। ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণেও অনেক স্থানে ড্রেনেজ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদানটি ক্ষতিগ্রস্ত বা বন্ধ হইয়া গিয়াছে। একই কারণে ভরাট বা বন্ধ হইয়াছে বহু ম্যানহোলও। এখন এই ব্যাপারে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনকে ত্বরিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হইবে। ওয়াসা দীর্ঘ চার দশকেও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে নাই যাহা দুঃখজনক। এখন এই ব্যাপারে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করিয়া ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সচল করিতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন নালা-নর্দমার তলানিতে জমিয়া থাকা বর্জ্য ও পয়ঃবর্জ্য দ্রুত অপসারণ করা। একইসঙ্গে ঢাকা শহরের দখলকৃত খালগুলি উদ্ধার করিয়া সচল করিবার জরুরি উদ্যোগও নিতে হইবে। আমরা যদি এই ব্যাপারে এখন হইতেই কাজ শুরু করি, তাহা হইলে আশা করা যায় যে, আগামী বত্সর রাজধানীর জলাবদ্ধতা বহুলাংশেই দূর হইবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ