সারা বিশ্বে সকল নাগরিকের জন্য তথ্য অধীকার নিশ্চিত করতে পালিত হয় তথ্য অধীকার দিবস। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস প্রতি বছর ২৮ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় । স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।
একটা দেশের শাসন ব্যবস্থায় আইনের শাসন,মৌলিক মানবাধিকার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা,সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা একটি আদর্শ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য জরুরী। তথ্য প্রাপ্তির অধিকার বাক-স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিগনিত। তথ্য অধিকারকে জনগণের ক্ষমতায়নের একটি মাধ্যম হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। যতো বেশী তথ্য প্রবাহ জনগনের দোর গোড়ায় পৌঁছবে,ততোই সচেতনতা বাড়বে,বাড়বে কাজের গতিও।
অবাধ তথ্য প্রবাহ না থাকলে জনগনের মৌল মানবিক অধীকার আদায় সম্ভব নয়। ব্যক্তির অধীকার আদায়ে তথ্য অধীকার দিবসের গুরুত্ব অনেক।“বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতা নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ আছে।”
দেশের জনগনের অধিকারের বাস্তবায়ন,তাদের সামাজিক ক্ষমতায়নের দ্বারা সরকারী-বেসরকারী সকল স্তরের প্রতিষ্ঠানের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে অবাধ তথ্য প্রবাহ সৃষ্টি করা যায়। গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করাও অবশ্যক। তথ্য অধিকার আইন,২০০৯ দেশের জনগনের দীর্ঘ দিনের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করেছে।
“২০ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে ‘তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ, ২০০৮’ জারি করা হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকার ’তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ, ২০০৮’-কে আইনে পরিণত করার উদ্যোগ নেয় এবং ৯ম জাতীয় সংসদের ১ম অধিবেশনে যে কয়টি অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হয় তার মধ্যে ’তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অন্যতম। উক্ত অধিবেশনে ২৯ মার্চ, ২০০৯ তারিখে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ পাস হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ৫ এপ্রিল, ২০০৯ তারিখে এ আইনটিতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং ৬ এপ্রিল, ২০০৯ তারিখে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়।”
তথ্য অধিকার আইন খুব সহজেই প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়,কারন এ বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজন হয়েছে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাসহ মানুষের মধ্যে এই আইনের প্রায়োগের বিষয় স¤পর্কে জ্ঞান লাভ এবং তথ্য অধীকার বিষয়ে প্রচার ও প্রসারকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া। আমাদের দেশের জনগনকে তথ্য অধিকারের সুফল পেতে ব্যাপকভাবে এ আইনটি স¤পর্কে জানতে হবে,মানতে হবে সঠিক প্রয়োগের বিষয়গুলো। তথ্য অধিকার স¤র্পকে সঠিকভাবে অবগত হয়ে আইনের প্রয়োগ স¤পর্কে নিজেদের ক্ষমতায়নের পথ সুগম করতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসতে হবে। সার্বিক উন্নয়নের জন্য অবাধ তথ্য প্রবাহ,তথ্য অধীকার প্রাপ্তি সময়ের দাবি।
তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংশ্লীষ্ট সরকারী মহলের হলেও সমাজের অন্যান্য অংশ যেমন বেসরকারি,স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, সচেতন-সুশীল সমাজ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক-অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, জনপ্রতিনিধি,রাজনীতিবিদ,এনজিও কর্তাব্যাক্তি,আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদিচ্ছা ও বাস্তবায়ন দরকার। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে অধীকার সচেতনা,তার মুক্তচিন্তা,তার ভাবনা তথ্য অধীকার প্রাপ্তীতে গুরুত্বপুর্ণ।
সর্বোপরি যার যার অবস্থান থেকে সর্বস্তরের জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ জরুরী। সঠিক চিন্তা ও চেতনার সম্মিলনে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হোক জনগনের তথ্য প্রাপ্তি সহজ ও সকল ক্ষেত্রে সঠিক । নাগরিক সচেতনতা আর সরকারের সদিচ্ছাই পারে তথ্য অধিকারকে সার্বজনীনতা দিতে। আর্ন্তজাতিক তথ্য অধীকার দিবস সফল ও স্বার্থক হোক…।
লেখক: সফিউল্লাহ আনসারী, সাংবাদিক