সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাদারীপুর জেলার শিবচরে পদ্মা নদীতে অবাধে চলছে জাটকা নিধন ও তীরবর্তী বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের উৎসব। সন্ধ্যা নামলেই জাটকা নিধনে জেলেদের নৌকায় কানায় কানায় ভরে যায় নদীটি! চারদিকে তাকালেই চোখে পড়ে জেলে নৌকার মিটিমিটি আলো।
এ যেন এক মহা উৎসবের আমেজ নেমে এসেছে ওই নদীতে! কোন প্রকার বাঁধা ছাড়াই জেলেরা নদীতে জাটকা শিকার করে যাচ্ছে। নদীর তীরবর্তী একাধিক বাসিন্দারা ইনকিলাবকে জানান, নৌ- পুলিশ এবং মৎস্য কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে বন্ধ হচ্ছে না জাটকা নিধন। তবে কোস্ট গার্ডের লোকেদের মাঝে মধ্যে নদীতে টহল দিতে দেখা যায়।
পদ্মা নদীর তীরেই মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলাটি অবস্থিত। প্রতি বছর অক্টোবর মাসে ‘মা’ ইলিশ যেন অবাধে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য নদীতে ২২দিনের জন্য মাছ ধরার ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ডিম থেকে প্রজননশীল ইলিশ হতে প্রায় ৭/৮ মাস সময় লেগ যায়। যার কারণে নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা নিধন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয়ে ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা চলমান রয়েছে। সাধারণত লম্বায় ৮ ইঞ্চি হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই মাছ প্রজননশীল হয় না। এর চেয়ে ছোটো মাছগুলোকেই জাটকা নামে অবহিত করা হয়।
রাতে সরেজমিনে পদ্মা নদীতে গিয়ে জাটকা নিধনরত অবস্থায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জাটকা শিকারের রহস্য জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমরা তো সবাইকে ম্যানেজ করেই নদীতে জাটকা ধরি। প্রশাসনের কেউ নদীতে আসার আগেই আমরা তা জানতে পারি। তখন আমরা নিরাপদ স্থানে চলে যাই। তারা চলে যাওয়ার পর আমদের কাজ আমরা করি।
খুব সকালে সরেজমিনে নদীর তীরবর্তী কয়েকটি বাজারে (কাঁঠাল বাড়ি পুরান ফেরি ঘাট বাজার, মাদবরেরচর হাট, নাসিরের মোড়, বেইলি ব্রিজ বাজার, মালের হাঁট) গেলে দেখা যায়, সারারাত ধরে জেলেদের নিধনকৃত জাটকাগুলো নিয়ে একে একে বাজারগুলোতে এসে উপস্থিত হতে। জেলে ও ক্রেতাদের উপস্থিতিতে ক্রয়-বিক্রয়ের হাঁক-ডাক শুরু হয়ে যায়। সেখানেও নেমে আসে আরও এক উৎসবের আমেজ! উল্লেখ্য, নৌ-পুলিশ ফাঁড়িটির ছাদে দাঁড়ালেই একটা বাজার(কাঁঠাল বাড়ি পুরান ফেরি ঘাট বাজার) দেখা যায়! আর বাকি বাজারগুলোও কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই! জানা যায়, মাওয়া বাজারগুলোতেও একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়।
নদীর তীরবর্তী এক সচেতন বাসিন্দা আমদেরকে বলেন, পুলিশ – প্রশাসন যদি ইচ্ছে করে, তাহলে এভাবে নদীতে জাটকা নিধন করে বাজারে তা অবাধে বিক্রি করতে পারতো না। মাঝে মধ্যে তাঁরা নামে মাত্র অভিযান পরিচালনা করে। এরপর আবার যেই – সেই! তবে ওইসময় পার্শ্ববর্তী কিছু এতিমখানার লাভ হয়। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমদের মতো সাধারণ মানুষ ইলিশ মাছ খেতে পারবে বলে মনে হয় না! এই সময়টা জাটকা নিধন বন্ধ করা গেলে, অল্প টাকায় আমরাও সুস্বাদু মাছটি খেতে পারবো আবার বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা যাবে।
মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা কালে জাটকা ধরা, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপণন দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অনুযায়ী ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটার আকৃতির ইলিশ জাটকা হিসেবে গণ্য হবে। এই আইন অমান্য করলেই শাস্তির বিধান রয়েছে, এক বছর থেকে দুই বছর জেল অথবা পাঁচ হাজার টাকা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
মাওয়া কোস্ট গার্ড এর কর্মকর্তার সাথে মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
কাঁঠাল বাড়ি নৌ-পুলিশ কর্মকর্তা( আইসি) আনিসুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের নৌযান সংকট সত্যেও আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের নৌ -পথের অভিযান চলমান রয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস ইবনে রহিম ইনকিলাবকে বলেন, আমদের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে নদী থেকে বেশ কয়েক মন অবৈধ জাল জব্দ করে তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাজারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে কয়েক মন জাটকা জব্দ করে পার্শ্ববর্তী এতিমখানায় দিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে নদীতে এবং বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা আরও বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ জাল তৈরী করার কারখানাগুলো৷ বন্ধ করা গেলে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়টা আরও বেশি কার্যকর হবে।