তীব্র দাবদাহে পুড়ছে যশোর। শনিবার সীমান্তবর্তী জেলাটিতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যশোর জেনারেল হাসপাতালে গরমজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গরমে প্রতি ঘণ্টায় দুই থেকে তিনজন রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালটিতে। চাপ বেড়েছে বহির্বিভাগেও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ২৪ জন। এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৮৫ জন। অপরদিকে পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে গরমজনিত রোগে ভর্তি রয়েছেন ২৯ জন। এদিনে শিশু বহির্বিভাগ থেকে ১৪২ জন ও মেডিসিন বহির্বিভাগ থেকে ২৫৬ জন চিকিৎসা নিয়েছে। যা গত এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল কতৃপক্ষ আরও জানিযেছে, গত এক সপ্তাহে শিশু ওয়ার্ডে ৫৩৪, পুরুষ এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ৩৪৪ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া গত চার দিনে শিশু বহির্বিভাগে ৫৬০ জন ও মেডিসিন বহির্বিভাগ থেকে ৫১৫ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে শিশু বহির্বিভাগে ১৮ এপ্রিল ১৪২, ১৯ এপ্রিল একশ’ ১৩২, ২০ এপ্রিল ১৪৪ ও ২১ এপ্রিল ১৪২ জন চিকিৎসা নিয়েছে।
অপরদিকে, মেডিসিন বহির্বিভাগ থেকে ১৮ এপ্রিল ১১১, ১৯ এপ্রিল ১১৯, ২০ এপ্রিল ১২৯ ও ২১ এপ্রিল ১৫৬ জন চিকিৎসা নিয়েছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাভাবিকের তুলনায় রোগীর চাপ বেড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা বেশি। ওয়ার্ডের কোনো বেড এবং কেবিন খালি নেই। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের কোথাও নতুন আসা রোগীদের জন্য বেড খালি না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে মানুষদের। অনেকে বাড়তি বেড বরাদ্দের দাবিও তুলেছেন।
যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুর গ্রামের এক শিশু রোগীর মা বেবি বেগম বলেন, ‘গত দু’দিন ধরে মেয়ে মারিয়া ডায়রিয়াতে আক্রান্ত থাকায় হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার ভর্তি করে দিয়েছেন। ওয়ার্ডে জায়গা না পাওয়ায় অন্য রোগীর বেডে বসে মেয়েকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।
আব্দুলপুর গ্রামের ওলিয়ার রহমান জানান, পানিশূণ্যতা নিয়ে গত তিনদিন ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বেড পাননি। ক্লিনিকে চিকিৎসা করার সামর্থ না থাকায় গরমে হাসপাতালের বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানান।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ জসীম উদ্দীন জানান, গরমে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। অসচেতনতার কারণে শিশুরা ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে ঝুঁকিও বাড়ছে। আক্রান্তদের অনেককেই দেরী করে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। শিশুদের ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা দিলেই নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
চিকিৎসকরা বলেছেন, এমন তীব্র গরমে মানুষের সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এই গরমেও নিরাপদ ও ভালো থাকা যায়। যেমন, এ সময় বাইরে বের হলে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচুর পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন ও তরল খাবার খেতে হবে। তেল-মশলাজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
এছাড়াও শরীরের কোনো অংশে সরাসরি রোদ লাগানো যাবে না। বাইরে বের হওয়ার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে, সানগ্লাস ও ছাতা, মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। রাস্তার খোলা খাবার পানি বা সরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কোথাও যাওয়ার আগে সঙ্গে অবশ্যই নিরাপদ খাবার পানি নিতে হবে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।