• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ অপরাহ্ন

জীবন ও সম্পদের এই অপচয় থামাইতে হইবে

আপডেটঃ : বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭

ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৫০০ কম্বল আর নগদ টাকাসহ রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে গিয়াছিলেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের কয়েকজন তরুণ ব্যবসায়ী। কিন্তু তাহাদের আর ঘরে ফেরা হয় নাই। ঢাকা প্রত্যাবর্তনের পথে গত সোমবার সকালে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার কান্দাইল এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তাহাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের। ইহাতে চালকসহ ৫ ব্যবসায়ীই প্রাণ হারান মর্মান্তিকভাবে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নরসিংদী শিবপুর উপজেলার কারারচর বিসিক শিল্পনগর এলাকায় বাসের সহিত লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় আরও তিনজনের। আগেরদিন পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের বহলবাড়িয়ায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে হতাহত হইয়াছে ২৭ জন। একইদিনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জের আড়পাড়া এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারাইয়া উল্টাইয়া গেলে প্রায় ২৫ জন যাত্রী হতাহত হয়। দেখা যাইতেছে, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় পৃথক চারটি দুর্ঘটনায় ঝরিয়া পড়িয়াছে ১৬টি মূল্যবান জীবন। আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। তবে ইহা মাত্র কয়েকটি জেলার বড় কয়েকটি দুর্ঘটনার হিসাব। সারাদেশের চিত্র অনুমান করা কঠিন নহে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫৮ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ২৮৮ জন। আহতের হিসাব কেহ রাখে নাই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হইল, জীবন ও সম্পদের এই যে বিপুল অপচয় তাহা থামাইবার কার্যকর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নহে।

 

আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলি যে ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হইয়াছে তাহা সংশ্লিষ্ট সকলেই জানেন। জানেন ইহার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় তথ্যও। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, উপরে উল্লিখিত দুর্ঘটনাগুলির জন্য হাইওয়ে পুলিশ চালকের বেপরোয়া মনোভাবকেই দায়ী করিয়াছেন। এই তথ্যও নূতন নহে। অধিকাংশ চালকই যে নিয়মনীতির পরোয়া করেন না তাহা সুবিদিত। তন্মধ্যে আবার রহিয়াছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অপ্রাপ্তবয়স্ক, মাদকাসক্ত, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক। পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করিয়া তুলিয়াছে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির আধিক্য। কর্তৃপক্ষ সবই জানেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নেন না। ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনার জন্য আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলিও কোনো অংশে কম দায়ী নহে। সড়কের কারিগরি ত্রুটি তো আছেই, তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে নানা রকম বিশৃঙ্খলা। যত্রতত্র যথেচ্ছভাবে গড়িয়া উঠিয়াছে হাটবাজার ও গাড়ির জটলা। আছে শ্লথগতির নসিমন-করিমন— এমনকি রিকশা ও ভ্যানের ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল। সব চাইতে বড় সমস্যাটি হইল, ডিভাইডারবিহীন স্বল্প পরিসরের রাস্তা। ইহা তো স্বীকার করিতেই হইবে যে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা যেইভাবে বাড়িয়াছে, রাস্তা সেইভাবে প্রশস্ত হয় নাই। এমনকি যেই সকল সড়ককে চার লেনের বলা হইতেছে সেইগুলিতেও দেখা যায়, একপাশে একটি ট্রাক বা বাস অচল হইয়া পড়িলে যানবাহন চলাচল স্থবির হইয়া পড়ে। পাশাপাশি, ইহাও লক্ষণীয় যে বেশিরভাগ মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিতেছে ডিভাইডারবিহীন সড়কগুলিতে। অতএব, যত দ্রুত সম্ভব মহাসড়কগুলি প্রশস্ত করিতে হইবে এবং ডিভাইডার স্থাপনের মাধ্যমে আসা-যাওয়ার পথ আলাদা করিতে হইবে।

 

সর্বাপেক্ষা জরুরি হইল, সড়ক-মহাসড়কগুলিতে যে অরাজকতা চলিতেছে তাহা বন্ধ করিয়া শৃঙ্খলা ফিরাইয়া আনিতে হইবে অবিলম্বে। জনস্বার্থে সকলকে বাধ্য করিতে হইবে আইন মানিয়া চলিতে। মনে রাখিতে হইবে যে আইনের প্রয়োগ যাহারা করিবেন তাহাদের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার বিষয়টিও কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নহে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ