বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পড়ার টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
গত বুধবার রাত ১০টার দিকে ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। এতে কমপক্ষে আট জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও কলেজ ছাত্রাবাসের কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
আহতরা হলেন কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী (৩০তম ব্যাচ) রিদওয়ান হক, একই ব্যাচের তালহা, নাদিম ও আরিফ। তারা সবাই কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায়ের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সীমান্ত, আলী হাসান, ইসমাম ও অপর্ণ নিলয়। আহত সকল শিক্ষার্থীদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায় ও বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন রনির সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কলেজ প্রশাসন বৃহস্পতিবার একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শেষে অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে আতিকুরকে সভাপতি ও মোফাজ্জলকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ছয় সদস্যের একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনই ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। কমিটি ঘোষণার পরপরই এই দুই নেতা কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। এর জেরে গত বছরের ৩০ মার্চ দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা ও আবাসিক হোস্টেলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও করা হয়। তবে সেই তদন্ত কমিটি আলোর মুখ দেখেনি।
এরমধ্যে কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমবিবিএস ও ইন্টার্ন শেষ হলে ওই কমিটি বিলুপ্ত করে চলতি বছররে ৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ শৈশব রায়কে সভাপতি এবং মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। ঘোষিত এই কমিটিতে কাঙ্খিত পদ না পাওয়ায় সাবেক সাধারণ সম্পদক মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারিরা মনক্ষুন্ন হন। কলেজে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে বর্তমান সভাপতি শৈশব রায় ও মেহেদী হাসানের অনুসারীদের সঙ্গে মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারিদের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
গত মঙ্গলবার তাদের মধ্যে একটি পড়ার টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডতা হয়। এর জেরে বুধবার রাতে ফুয়াদ তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে আলী হাসানের কাছে থাকা পড়ার টেবিলটি নিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ঘের সূত্রপাত ঘটে। পরে ক্যাম্পাস জুড়ে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত ১১টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় মোফাজ্জলের অনুসারী ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল, ছাত্রলীগ কর্মী মোহাইমিন রাইম ও সীমান্তকে অধ্যক্ষের নির্দেশে পুলিশ আটক করে। ছাত্রবাসের বাহিরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পুরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায় জানান, একটি টেবিল দখলকে কেন্দ্রে করে কিছু দুষ্টু প্রকৃতির শিক্ষার্থীরা বিনা উসকানিতে আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করতে জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে।
মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান জানান, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। অধ্যক্ষের নির্দেশে তিনজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল জানান, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।