• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন

চাই মাদকমুক্ত সমাজ

আপডেটঃ : শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭

সফিউল্লাহ আনসারী
মাদক সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির জন্য একটা অন্যতম সমস্যা। মাদকের অবৈধ ব্যবহার দিন দিন আমাদের প্রজন্মকে গ্রাস করে নিচ্ছে। ধ্বংস করছে আমাদের মেধাকে। ঘটছে সামাজিক অবক্ষয় ।
মাদক সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয় এটি এখন বিশ্ব জুড়েই গুত্বপুর্ণ সমস্যার মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘের অগ্রাধিকার তালিকায় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারকে অন্যতম সমস্যা হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যে সমস্যাটি বাংলাদেশও এই ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে যুব সমাজকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও মাদকের অপব্যবহার একেবারে কম নয়। পার্শ্ববতী দেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে এদেশে চোরাকারবারিরা মাদক আমদানি করছে। এতে করে বাংলাদেশে দিন দিন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার বেড়েই চলেছে। মাদক কারবারিদের প্রধান টার্গেট হয়ে ভয়াবহ মরণ নেশার নির্মমতার শিকার হচ্ছে এই তরুণ ও যুবসমাজ।
মাদক সেবনের ফলে তরুণ ও যুবসমাজ তাদের জীবনীশক্তি, সৃজনশীলতা, নৈতিকতা ও মেধা-মনন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। হতাসায় নিমজ্জিত হয়ে তাদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ জীবন হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত। অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে অন্ধকার করে এসব তরুন-যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ডে।
ইদানিং ইয়াবার সর্বনাশা থাবায় আমাদের প্রজন্ম ধ্বসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পার্শ্ববতী দেশ মিয়ানমার থেকে এ মরণ নেশা দিনে-রাতে এদেশে সীমান্ত দিয়ে আসছে। মরার উপর খাড়ার ঘা রোহিংগা সম্প্রায়ের লক্ষ লক্ষ সদস্য সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকছে। এদেরকে ব্যবহার করে চোরাকারবারিরা বিপুল পরিমানে ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে। ইতমধ্যে কয়েকজন রোহিংগা ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। এই জনস্রোতের সাথে মরণ নেশা ইয়াবার চালান ঠেকানো না গেলে দেশে মাদকের ভয়াবহ রুপ দেখা দেবে। যা কোন ভাবেই সুখকর নয়,বরং খুবই চিন্তার বিষয়।
মাদক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে নিরাপদ ট্রানজিট রোড হিসাবে ব্যবহার করছে, যার কারন হিসেবে দেখা হচ্ছে ভৌগলিক অবস্থানকে। ভৌগলিক অবস্থানগত কারনে অতি সহজেই মাদক কারবারিরা প্রতিদিনই বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে অবৈধ মাদকের চালান নিয়ে আসছে কিছু দুর্ণিতিপরায়ণ সীমান্ত রক্ষীদের সহযোগীতায়। আর বিজিবির  হাতে ধরা পড়ছে খুবই কম,বলা যায় পরিমানটা লোক দেখানোতেই সীমাবদ্ধ ।
একটু লোভের কারনে কতিপয় চোরাকারবারির কারনে দেশের ভেতর মাদক ঢোকছে এবং তা চলে যাচ্ছে আমাদের দেশের তরুন ও যুব সমাজের কাছে। খুব সহজেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। হাতের কাছে সহজলভ্য এসব ইয়াবা,মদ,গাজা,হিরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের  মাদক দ্রব্য সেবনে ধ্বসের দিকে যাচ্ছে দেশের মেরুদন্ড তরুণ-যুব সমাজ। মাদকাসক্ত ব্যাক্তি শুধু তার জীবনই নয়, দুর্বিসহ করে তুলছে তার পরিবারের সদস্যদের জীবন, কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের প্রতিবেশীদের জীবন। সমাজে ঘৃনিত ব্যাক্তি হিসেবে মাদকসেবীর পরিবারকেও ঘৃনার চোখে দেখছে সমাজের মানুষ।
জরিপে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের শতকরা ৮০ ভাগ তরুণ ও যুবক। মাদকের কারনে আমাদের দেশের তরুণ ও যুবসমাজ আজ মারাত্বক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। মাদকাসক্তরা চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ধ্বংস করছে তাদের জীবন,আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে মাদকের অপব্যবহার। অপরাধমুলক কর্মকান্ডের কারনে দেশ জুড়েই আইনশৃঙ্খলারও চরম অবনতি হচ্ছে।
মাদকের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে সর্বপ্রথম আমাদের সামাজিক সচেতনতা, মাদকবিরোধী আন্দোলন,মাদকের সহজলভ্যতা রোধ করতে হবে। সমাজের তরুন-যুবকদের হাতে মাদকদ্রব্য যাতে সহজেই পৌঁছুতে না পারে সেদিকে খেয়াল রেখে মাদক পাচার রোধে অবশ্যই আইন শৃংখলাবাহিনীর গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকার পাশাপাশি সমাজের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। মাদক বিরোধী প্রচারণায় গণসচেতনতা বাড়ানোতে প্রয়োজন সমাজের সর্বস্তরের মানুষের স¤পৃক্ততা। শহরের পাড়া-মহল্লা, গ্রামে-গঞ্জে, স্কুল কলেজে,মসজিদ ও মাদরাসায় মাদকবিরোধী সচেতনা মুলক প্রচারণা ব্যাপকভাবে চালানো দরকার। আর এ কাজে সমাজের নেতৃত্বদানকারী ব্যাক্তি,জনপ্রতিনিধি ও এনজিও‘র ভুমিকা সবচেয়ে বেশী থাকা দরকার ।
মনে রাখতে হবে,একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি সামাজিক অবক্ষয়ের শিকার। মাদক গ্রহনের ফলে সে অসুস্থ হচ্ছে,পরিবেশকেও অসুস্থ করে তোলছে। তাকে সুস্থতার দিকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা,আন্তরিক সহযোগীতা। তার মতামতকে মূল্যায়ন করে সকলের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবই একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করতে পারে। হয়তো সমাজ ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়,কিন্তু সমাজের একজন বিপথগামী,অসুস্থ,মাদকসেবীকে অবশ্যই ভালোর দিকে ধাবিত করে সুন্দর জীবন  উপহার দেয়া সম্ভব। এবং এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
আসুন মাদকে না বলি। আমাদের সন্তানদেরকে সময় দিই,তাদের মতামতকে মুল্যায়ন করি। তারা কি করছে,কোথায় যাচ্ছে,কোনা যাচ্ছে সেদিকে নজর রাখি। তারা যাতে খারাপ পথে পা না বাড়ায়,মাদকের ভয়াবহ অন্ধকারে না প্রবেশ করে তার জন্য সচেতন হই। আর এ ক্ষেত্রে মা-বাবার ভুমিকা অগ্রগণ্য।
সচেতনতাই মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সহায়ক। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সরকারের পাশাপাশি পরিবার,সমাজ ও ব্যাক্তির সহযোগীতামুলক গনসচেতনতা প্রয়োজন। মাদকমুক্ত দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। জীবন ও দেশকে ভালোবাসতে পারলে মাদক কখনো আমাদের গ্রাস করতে পারবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ