১৯৭০-এর ১২ নভেম্বর আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে ১০ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। অনেক পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। অনেক পরিবার তাদের আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মা, ভাই-বোন হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। প্রতি বছর যখন ১২ নভেম্বর ফিরে আসে, তখন বেদনাবিধূর সেই দিনটির কথা ভেসে ওঠে স্মৃতির পাতায়।
সেদিন আমি ছিলাম জন্মস্থান ভোলায়। বঙ্গবন্ধু আমাকে আসন্ন নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে ব্যস্ত ছিলাম আমার নির্বাচনী এলাকায়। কয়েকদিন ধরেই গুমোট আবহাওয়া ছিল। বৃষ্টি এবং সেইসঙ্গে ছিল ঝড়ো বাতাস। এরকম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আমার নির্বাচনী এলাকা সহ ভোলায় ব্যাপক গণসংযোগ করি। আমার নির্বাচনী এলাকা ছিল ভোলা থানা, দৌলত খাঁ থানা, তজিমুদ্দী থানা। তখন মনপুরা থানা হয়নি। কিন্তু মনপুরার তিনটি ইউনিয়নও আমার নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর একটি এলাকা ছিল বোরহানউদ্দিন, লালমোহন এবং চরফ্যাশন।
’৬৯-এর উত্তাল গণআন্দোলনে যে গণবিস্ফোরণ ঘটে তাতে ২৫ মার্চ আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতাসীন হন। এ সময় মার্শাল ল’র মধ্যে রাজনৈতিক তত্পরতা নিষিদ্ধ ছিল। পরে সামরিক কর্তৃপক্ষ জুন মাস থেকে ঘরোয়া রাজনীতি দেয়। ’৭০-এর ৭ জুন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগে যোগদান করি। ’৭০-এ জানুয়ারির ১ তারিখ রাজনৈতিক তত্পরতার উপর থেকে বিধি-নিষেধ প্রত্যাহূত হয়। তখন আমি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ডাকসু’র ভিপি।
প্রতিমাসে ভোলায় যাই। রাজনৈতিক গণসংযোগ ও নির্বাচনী জনসভা করি। ডিসেম্বরের ৭ তারিখ নির্বাচন যখন ঘনায়মান ঠিক তার ২৫ দিন আগে ১২ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হলো দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। আমি তখন ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় লিপ্ত। ১২ নভেম্বরের তিন-চার দিন আগ থেকেই বিভিন্ন জায়গায় বিরাট বিরাট জনসভা করেছি। ১০ তারিখ আমার জনসভা ছিল তজুমুদ্দী। ১১ তারিখ লালমোহনে মঙ্গল শিকদারে জনসভা করতে যাই। সেখানে বিশাল জনসভায় যখন বক্তৃতা করছি তখন শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি এবং প্রচণ্ড ঝড়। ১২ তারিখ আমার জনসভা ছিল তজুমুদ্দীর দাসের হাট। সবাই আমাকে নিষেধ করল আপনি এই জনসভায় যাবেন না। কিন্তু আমি তো রিকশা করে মাইক পাঠিয়েছি। আমার লোক চলে গেছে দাসের হাটে। আমার মা যিনি আমার জীবনের প্রেরণার উত্স—তিনিও নিষেধ করলেন। বাধ্য হয়ে ফিরে এলাম। ফিরে রাতে শ্বশুরালয়ে অবস্থান করছি। মধ্যরাতে শুরু হয় তুমুল ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস।
আমি ছিলাম ভোলা-১ আসনে এমএনএ পদপ্রার্থী। আর আমার নির্বাচনী এলাকায় এমপিএ প্রার্থী ছিলেন ভোলার মোশারফ হোসেন শাহজাহান। সকাল বেলা আমি এবং মোশারফ হোসেন শাহজাহান নদীর পাড়ে গিয়ে অবাক ও বিস্মিত হলাম। শুধু কাতারে কাতারে মানুষের মৃতদেহ। অসংখ্য লোকের মৃতদেহ আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে। আমরা দিশেহারা হয়ে গেলাম। এখনো স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে শিবপুর ইউনিয়নে রতনপুর বাজারের পুকুর পাড়ে শত শত লোককে দাফন করার দৃশ্য! এত মৃতদেহ যে, দাফন করে আর কুলাতে পারছি না। যতদূর যাই শুধু মানুষের হাহাকার আর ক্রন্দন। এই শিবপুর ইউনিয়নে একটা বাড়ি যেখানে ৯০ জন লোক ছিল। কিন্তু বেঁচে ছিল মাত্র ৩ জন। যখন তজুমুদ্দীর খবর পাই তখন শুনি যে, ৪০% লোকের মৃত্যু হয়েছে। যে দাসের হাটে জনসভা করার কথা ছিল সেখানে কিছুই নেই। আমার মাইক যে বহন করেছিল তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। দাসের হাটে বড় বড় ব্যবসায়ী ছিলেন তারা সকলেই সর্বস্বান্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তখন নির্বাচনী গণসংযোগে সাতক্ষীরায় অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে লোক মারফত ৫ হাজার টাকা সহ বার্তা পাঠালেন, আমি যেন সর্বত্র দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করি এবং শুকনো খাবার বিশেষ করে চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি মানুষের কাছে পৌঁছে দেই। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ত্রাণ কাজ করেছিলাম ’৭০-এর এই দিনগুলোতে।
১৪ তারিখ বঙ্গবন্ধু ভোলায় ছুটে এলেন। ভোলায় বঙ্গবন্ধু আমার শ্বশুরালয়ে উঠলেন। সেখান থেকে হাবিবুর রহমান তালুকদারের লঞ্চে করে বঙ্গবন্ধুকে আমরা দুর্গত এলাকায় নিয়ে গেলাম। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, লক্ষ মানুষের মৃতদেহ আর সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া দুঃখী মানুষের পাশে তিনি দাঁড়ালেন। তাদের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দিয়ে তাদের সমব্যথী হলেন। তারপর সেখান থেকে ফেরার সময় বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আর আমার পক্ষে এগুলো দেখা সম্ভবপর নয়! আমাকে তাড়াতাড়ি ঢাকা পাঠিয়ে দাও।’ যে বিশেষ লঞ্চে বঙ্গবন্ধু ভোলা গিয়েছিলেন সেই লঞ্চে করে তিনি ঢাকায় ফিরে এলেন।
উপকূলীয় দুর্গত এলাকা ভোলা, রামগতি, হাতিয়া, সন্দ্বীপ সফর শেষে হোটেল শাহবাগে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দুর্গত এলাকা আমি সফর করে এসেছি। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে লক্ষ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে। এভাবে আমরা মানুষকে মরতে দিতে পারি না। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এখনো দুর্গত এলাকায় আসেন নাই। আমরা যে কত অসহায় এই একটা সাইক্লোন তা প্রমাণ করেছে। আরো একবার প্রমাণিত হলো যে, বাংলার মানুষ কত অসহায়! একবার পাক-ভারত যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে। আরেকবার এই ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রমাণিত হলো। সুতরাং, আমরা এইভাবে আর জীবন দিতে চাই না। আমরা স্বাধিকারের জন্য, আমাদের মুক্তির জন্য আত্মত্যাগ করতে চাই।’ আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করব। এই নির্বাচন হবে আমার জন্য একটা গণভোট। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে কে বাংলাদেশের নেতা এবং কিভাবে এই অঞ্চল পরিচালিত হবে।’ ভোলা সহ উপকূলীয় দুর্গত এলাকা সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করে বাংলার মানুষকে তিনি এক কাতারে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি তখন আর্তের সেবায় উত্সর্গিত। উদয়াস্ত কাজ করছি। ভোলা সহ দুর্গত এলাকার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ-খবর নিতেন। দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে সাহেবজাদা ইয়াকুব খান এলেন ভোলায়। আমি তার সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে গাড়িতে তুলে নিলেন। ১৪ দিন পর অর্থাত্ ২৬ নভেম্বর সী প্লেনে চেপে ভোলায় এলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। নামলেন চকিঘাটে। আমি চকিঘাটে গেলাম। চকিঘাট থেকে তিনি দৌলত খাঁ গেলেন। চারদিকে হাজার-হাজার লোক। প্রেসিডেন্টের গাড়িতে ছিলেন সাহেবজাদা ইয়াকুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক, আর ছিলেন গভর্নর আহসান। আমাকে প্রথমে ঘটনাস্থলে যেতে দিতে চাইছিল না। মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তাদের দাবির মুখে আমাকে যেতে দেওয়া হয়। পরে সাহেবজাদা ইয়াকুব আমাকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে বললেন, ‘হি ইজ মিস্টার তোফায়েল।’ জেনারেল ইয়াহিয়া বলেছিলেন, ‘হু ইজ তোফায়েল? স্টুডেন্ট লিডার তোফায়েল!’ তিনি বললেন, ‘ইয়েস, স্টুডেন্ট লিডার তোফায়েল।’ ইয়াহিয়া খান আমাকে ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের জন্য কী করতে পারি?’ আমি ইংরেজিতেই উত্তর দিয়ে বলেছিলাম, তবুও তো আপনি এসেছেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দুর্গত এলাকায় এসেছেন ঘটনার ১৪ দিন পর। আপনি এখনো নদীতে ভাসমান ও রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের মৃতদেহ দেখতে পাবেন। এই হলো আমাদের বাঙালিদের অবস্থা। তখন এদিক-ওদিক তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘আমার পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন।’ বললাম, আমি কেন ঘোষণা দেব? আপনার কর্মকর্তারা রয়েছেন। আপনি যা দান করবেন তা তাদেরকে বলেন ঘোষণা করতে। তখন প্রবেশনারী অফিসার সাদাত হুসাইন—যিনি পরে ক্যাবিনেট সেক্রেটারি হয়েছিলেন—তিনি একটি জিপের উপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন, ‘পাকিস্তানের মহামান্য প্রেসিডেন্ট আপনাদের জন্য ২৫ হাজার টাকা সাহায্য হিসেবে বরাদ্দ করেছেন।’ সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত জনসাধারণ চিত্কার দিয়ে উঠল—‘না’ ‘না’ ‘না’। আমি দু’হাত তুলতেই মানুষজন সকলে শান্ত হয়ে গেল।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঘূর্ণিঝড় দুর্গত অসহায় মানুষের জন্য এলাকায় এলাকায় ক্যাম্প করে যে ব্যাপক ত্রাণকার্য সেদিন আমি পরিচালনা করেছি তা আমার বাকি জীবনে চলার পথের পাথেয় হয়ে আছে। জাতীয় চারনেতার অন্যতম শ্রদ্ধেয় নেতা তাজউদ্দীন ভাই এক বিরাট লঞ্চ ভর্তি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ভোলা এসেছিলেন ত্রাণকার্যে। তার থেকে কিছু তিনি বিলি করতে পেরেছেন বাকিগুলো রেখে এসেছিলেন আমার কাছে। সেগুলো আমি বিলি-বণ্টন করেছি। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা একদম বিচ্ছিন্ন। আমার আসন সহ ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত উপকূলীয় এলাকার জাতীয় পরিষদের ১৭টি আসনে পূর্ব ঘোষিত ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। অবশ্য সুষ্ঠুভাবে ত্রাণকার্য পরিচালনার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ইতোমধ্যেই জনসাধারণের ব্যাপক সমর্থন পাই। মানুষ আমাকে বুকে টেনে মাথায় তুলে নিত। এই স্মৃতি জীবনে ভুলবার নয়।
আমার নির্বাচন হয় ১৭ জানুয়ারি ’৭১-এ। ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি যে শপথ অনুষ্ঠান হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেখানে আমিও শপথ গ্রহণ করি। যদিও তখনো নির্বাচিত হইনি। নির্বাচিত হয়েছি ১৭ জানুয়ারি। নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর জানলাম ৭২ হাজার ভোট পেয়েছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৬ হাজার ভোট। আমি তার থেকে ৬৬ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছি।
স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রথম যান ভোলা। ’৭০-এ তিনি দেখে এসেছিলেন জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত ভোলা। ১৪ ফুট জলোচ্ছ্বাসে সবই ভেসে গিয়েছিল। যে জায়গায় বেড়িবাঁধ ছিল না, সেই স্থানকে জিরো পয়েন্ট বলতাম আমরা। সেখান দিয়েই প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করেছে এবং নিমেষের মধ্যে সব তলিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু ছোট্ট একটি হেলিকপ্টারে করে ভোলা এসেছিলেন। আমি বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী ছিলাম। ভোলা গিয়ে সেই জিরো পয়েন্ট থেকে বঙ্গবন্ধু মাটি কেটেছেন এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। ভোলা থেকে তিনি রামগতি গিয়েছেন এবং সেখানেও তিনি বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্বোধন করেছেন। আজকে বেড়িবাঁধ দিয়ে আমরা জলোচ্ছ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকি, ঘূর্ণিঝড় হলে আমরা এখন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় গ্রহণ করি। আগে এই সাইক্লোন শেল্টারকে বলা হতো ‘মুজিব কেল্লা’। এটা বঙ্গবন্ধুই করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু চর কুকরী-মুকরী গেছেন সেখানে সাইক্লোন শেল্টার করেছেন। সেখানে জনসাধারণকে ডিপ টিউবওয়েল দিয়েছেন। বনায়ন করেছেন। বনায়ন করে জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর জন্য উপকূলীয় এলাকায় বঙ্গবন্ধু বনায়ন করেছিলেন। যেটা আজকে ফরেস্ট হয়েছে। এটা বঙ্গবন্ধুর অবদান।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একটি পোস্টার হয়েছিল সোনার বাংলা শ্মশান কেন? এই পোস্টারটিতে ’৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের কথাই ব্যক্ত হয়েছিল। দুটো ঘটনা বাংলার মানুষকে পথ দেখিয়েছে। এক, ’৬৫-এর পাক-ভারত যুদ্ধ। যখন আমরা ছিলাম ‘অরক্ষিত’। আর দুই, ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস যখন আমার ছিলাম ‘অসহায়’। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন তার মূল লক্ষ্য ছিল শোষণহীন অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। সেই দায়িত্বটা এখন বর্তেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্কন্ধে। তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে চলেছেন। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রতিবছর আগে বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করত, ঘরবাড়ি হারাত। সে-সব এখন আর নেই। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রশংসনীয়। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার যে ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলেছি তা এখন সারা বিশ্বের জন্য মডেল হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের অনুসরণ-অনুকরণ করতে পারে। বাংলাদেশে এখনো প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস হয়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে এখন আর আগের মতো ক্ষয়ক্ষতি হয় না। এটাই হলো বঙ্গবন্ধুর বাংলার স্বাধীনতার সফলতা।