টাঙ্গাইল প্রতিনিধি॥
টাঙ্গাইলের ‘মাহমুদপুর-পানকাতা গণহত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে ধনবাড়ী উপজেলার পানকাতা ইসলামীয়া হাইস্কুল মাঠে রোববার আলোচনা সভা ও মিলাদ-দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গোপালপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ও অনুষ্ঠানের আয়োজক অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের তালুকদার। বক্তব্য রাখেন, গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মিনহাজ উদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা তোরাপ আলী শিকদার, ধনকাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক ত্রিমোহনা ঢেউ’র সম্পাদক স ম জাহাঙ্গীর আলম, পানকাতা ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুফাখারুল ইসলাম লেবু, যুগান্তরের মধুপুর প্রতিনিধি এসএম শহীদ প্রমূখ।
স্থানীয় প্রশাসন এবং কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন দিবসটি পালনে উদ্যোগ এবং আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ না করায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গণহত্যার অনুষ্ঠানে টিআর, কাবিখা বা চাকুরী দেয়া নেয়ার বিষয় নেই, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ পুঁজি করে যারা রাজনীতি করে খায়, সে সকল নেতা-কর্মীর আজ এখানে অংশ গ্রহন নেই!’ গণহত্যা বিষয়ক আলোচনায় অংশ গ্রহণে কোন তাগিদ অনুভব না করায়, যারা মুক্তিযুদ্ধের সোলএজেন্ট দাবিদার তাদের মধ্যে বোধোদয় ঘটবে। গণহত্যার মতো শোকাতর বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে তারা একসময় আমছালা দুটোই হারাবেন। কারণ একাত্তর ছাড়া বাঙ্গালীর পথ চলা কখনোই কুসুমাস্তীর্ন হবেনা।
বক্তারা আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসন গণহত্যা দিবস পালন না করে উল্টো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় মাহমুদপুরে একটি সৌধ নির্মাণের দাবি জানান।
জানা যায়, ৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী রাজাকার ও আলবদরদের সাথে নিয়ে মাহমুদপুর গ্রামে হামলা চালায়। বঙ্গবন্ধুর সহচর ও এমএনএ হাতেম আলী তালুকদারের বাড়িতে প্রথমে অগ্নিসংযোগ করার পর শুরু করে অসংখ্য বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট।
হানাদাররা চাতুটিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে পৌঁছলে পানকাতা হাইস্কুলে অবস্থান করা কাদেরিয়া বাহিনীর কোম্পানী কমান্ডার হুমায়ুন বেঙ্গলের নের্তৃত্বে স্বল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মাহমুদপুর গ্রামের বটতলায় পাকিস্তানী হানাদারদের সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরে হানাদার বাহিনীরা শুরু করে মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন ও নরহত্যা। তারা শতাধিক নিরীহ মানুষকে আটক করে পানকাতা গ্রামের ঈদগাঁহ মাঠে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ২৩ জন শহীদ এবং অবশিষ্টরা গুরুত্বর আহত হয়। আহতদের মধ্যে পঙ্গু হয়ে এখনো অনেকেই বেঁচে রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে এমএনএ হাতেম আলী তালুকদারের কনিষ্ঠ ভ্রাতা হায়দার আলী তালুকদার ছিলেন অন্যতম।