তানোর প্রতিনিধি॥
রাজশাহী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফের নয়া-মেরুকরণের সুচনা হয়েছে সেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার পর পর রাজশাহী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নয়া-মেরুকরণ ও মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় ১৩ জুন ও ৩০ জুন আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের শক্ত ভাষন এবং তাদের শারীরিক ভাষায় এটা প্রায় নিশ্চিত এবার জনবিচ্ছিন্ন ও বির্তকিতরা কোনো ভাবেই দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণের অভিমত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটা বলেন সেটা করেন, এক্ষেত্রেও যদি সেটা হয় তাহলে রাজশাহীর অধিকাংশ এমপির মনোনয়ন দৌড় থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, রাজশাহীর অধিকাংশ এমপির বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপিপ্রীতি, নিয়োগ ও গম বাণিহ্য,প্রবীণ-ত্যাগীদের বঞ্চিত রেখে হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীদের অধিক মূল্যায়ন এবং জঙ্গি সম্পৃক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-পশ্রয় দেয়ার অভিযোগ তুলেছে দলেরই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৯ হবে ধরে নিয়ে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতমধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিটি সংসদীয় আসনের মাঠ জরিপ, নেয়া হচ্ছে তৃণমূলের মতামত, দেখা হচ্ছে ভোটারদের মানসিকতা ও সেই সঙ্গে তৈরী হচ্ছে সংসদ সদস্য এমপিদের আমলনামা। জানিয়ে দেয়া হয়েছে মূখ দেখে নয় তৃণমূলের মতামতের ভিত্ত্বিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে সেক্ষেত্রে যে কেউ ছিটকে পড়তে পারে। সূত্র জানায়, রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন করে এবার নবীন নেতৃত্ব বা নতুন মূখের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক গুঞ্জন বইছে। খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে বর্তমান সংসদ সদস্য এমপিদের  বিষয়ে পাশাপাশি অবার সাম্ভব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তিন যোগ্যতাকে মাপকাঠি হিসেবে ধরেছে আওয়ামী লীগ। প্রথমত এলাকার জনগণের কাছে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা (অবস্থান) কেমন, দ্বিতীয়ত দলের তৃণমূলের নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে প্রার্থীর সম্পর্ক কেমন ও তৃতীয়ত নির্বাচিত হবার পরে নিজ এলাকায় উন্নয়ন করার সক্ষমতা রয়েছে কি না-?। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শীদের চাকরি দেয়া, বিএনপি-জামায়াতপ্রীতি, দলের ত্যাগী-নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীদের অধিক মূল্যায়ন, একক আধিপত্য বজায় রাখতে দলীয়কোন্দল সৃষ্টি, স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়ন বালিজ্য ইত্যাদি বিষয়েও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব মানুষ দিয়ে দেশব্যাপী একাধিক জরিপ চালানো হচ্ছে। জরিপের ফলাফল দেথেই প্রার্থী বাছাই করা হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে এরই মধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে নির্বাজনী এলাকা ভিত্তিক সংসদ সদস্য ও সাম্ভব্য প্রার্থীদের কর্মকান্ডের ওপর জরিপের কাজ শুরু হয়েছে ও যাচাই করা হচ্ছে জনপ্রিয়তা। প্রতিটি আসনের সাংসদ ও সাম্ভব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করে একাধিক প্রার্থীর নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। বর্তমান সাংসদ এমপিদের কারা এলাকামূখী, কারা জনবিচ্ছিন্ন, কাদের আতœীয়-স্বজন অনিয়ম-দূর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, কারা জন ও কর্মীবান্ধব এই বিষয়গুলো জরিপে উঠে এসেছে। এমপিদের আতœীয়করণ, বিএনপি-জামায়াত ও স্বজনপ্রীতি, মাদক কানেকশান, দূর্নীতির অভিযোগসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে কোন কোন আসনে আগামি নির্বাচনে দলের জয় নিশ্চিত, আর কোন কোন আসনে হারের শঙ্কা রয়েছে। যেসব আসনে হারের শংকা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে সেখানে অন্য যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক ভোটারদের অবস্থান, মানসিকতা, দলের প্রতি সমর্থনের হার ও প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ শেষে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দলের হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরা হবে। শুধু নিজ দলের প্রার্থী নয় প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।আর এসব প্রতিবেদন মূল্যায়ন করেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অপরদিকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, রাজশাহীর অধিকাংশ আসনে বর্তমান এমপিরা বিদ্রোহের মূখে পড়েছে এরা মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। কারণ হিসেবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, অনেক সাংসদ এমপির ঘনিষ্ঠ আতœীয়-স্বজনরা বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও বিভিন্ন সংগঠনবিরোধী কর্মকান্ড, নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসাদাচরণ, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য ও তদ্বির বাণিজ্যসহ নানা বির্তকিত কর্মকান্ড করে তাদের রাজনৈতিক ইমেজের বারোটা বাজিয়েছে। তাদের আতœীয়-স্বজনদের এসব কর্মকান্ডের কারণে তারা রাজনীতির মাঠে অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বলে তৃণমূলের অভিযোগ। ওদিকে এসব নেতাদের বিষয়ে নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূলের নেতা ও কমী-সমর্থকদের মধ্যে চলছে জম্পেশ আলোচনা। এলাকার চায়ের দোকান ও মোড়ে মোড়ে নিজ নিজ পচ্ছন্দের নেতাদের প্রার্থীতার যৌক্তিকতা ও যোগ্যতা তুলে ধরে নেতাকর্মীরা চায়ের কাপে আলোচনা-সমালোচার ঝড় তুলেছেন। এসব বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Share Button