• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৩ অপরাহ্ন

ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা,

আরব ঐক্য, ইসরায়েলি বিভ্রমের পরাজয় অনিবার্য

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩

গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ বিষয়ে মিসরে শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল আঞ্চলিক আরব ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করে আঞ্চলিক যুদ্ধ প্রতিরোধ করা এবং গাজার বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া।

এই মহৎ চিন্তাগুলোর উদ্দেশ্য– ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তবে শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল আরবদের সমর্থনপুষ্ট এ বার্তা মিসর স্পষ্ট করলেও পশ্চিমা ফাঁকিবাজি এবং অপকৌশল থেমে নেই। এটি প্রমাণ করে– পশ্চিমারা এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চায় না; বরং ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতি তাদের নির্লজ্জ সমর্থন অব্যাহত রাখতে চায়।

বেদনাদায়ক বাস্তবতা হলো, সম্মেলনে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের মনোযোগ ছিল কেবল ইসরায়েলি দৃষ্টিভঙ্গির পুনরাবৃত্তির ওপর। চূড়ান্ত সংবেদনহীনতার পরিচয় দিয়ে তারা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোক ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’-এর কথা বলেছে। যার অর্থ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের ধ্বংস এবং এ অঞ্চলে নতুন করে আগুন জ্বালানো। তাদের অগ্রাধিকারে ছিল সেসব ব্যক্তির মুক্তির ব্যবস্থা, পশ্চিমারা যাদের জিম্মি বলে মনে করে। অথচ এ ব্যক্তিরা আসলে যুদ্ধবন্দি, যাদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি হতে পারে। পশ্চিমাদের এই সমর্থন বিশেষত ৭ অক্টোবর থেকে অব্যাহত। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় এরই মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং সংখ্যাটি বেড়েই চলেছে। ইউরোপসহ মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারাও ইসরায়েলি এ আগ্রাসনের সরাসরি অংশীদার। গাজা হামলায় সহায়তা করা, এর ন্যায্যতা দেওয়া এবং একে বৈধতা দিতে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের তৎপরতা যেমন এ অঞ্চলের জন্য সংকট তৈরি করছে, তেমনি পুরো বিশ্বের জন্যও তৈরি করেছে চ্যালেঞ্জ। একটি ইসরায়েলি পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে, যার সত্যতা খোদ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন। এটি এক উন্মাদের কর্ম ছাড়া কিছু নয়। সেখানে সাধারণ মানুষের মতো বাঁচার জন্য ফিলিস্তিনিদের অধিকার পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়নি।

ইসরায়েলি পরিকল্পনা হলো– কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর লাগলেও গাজায় হামাসের শিকড় উপড়ে ফেলা হবে। এর পর গাজায় নতুন ইসরায়েলি নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গাজার উত্তর সীমান্তের ভেতরে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত সংরক্ষিত অঞ্চল এবং পূর্ব সীমান্তের অভ্যন্তরে আরেকটি অঞ্চল তৈরি করা হবে। অর্থাৎ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অনুমতি ছাড়া এ অঞ্চলগুলোতে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে।

পরিকল্পনা অনুসারে গাজা উপত্যকার একটি বড় এলাকা অর্থাৎ আনুমানিক এর তিন ভাগের এক ভাগ পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা হবে। এর পর তা ইসরায়েলের সরাসরি বৈদ্যুতিন নজরদারিতে থাকবে। ইসরায়েলের এ বিভ্রম সত্য করতে হলে গাজায় হামাসের পরিবর্তে ইসরায়েলের অনুগত এক সরকার বসাতে হবে। তাদের পরিকল্পনা সফল হলে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজার দক্ষিণ পাশে গাদাগাদি করে থাকতে হবে।

এ ধরনের পরিকল্পনা পশ্চিমা কোনো বিবেকবান ব্যক্তি সমর্থন করতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবেই এতে ব্যাপক হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। ইসরায়েল তেল আবিবে জরুরি ভিত্তিতে একটি বড় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে এ জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে! এদিকে গাজার হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের নেতানিয়াহু শিবির যে প্রতিহিংসাপরায়ণ মানসিকতা লালন করছে, তাদের জন্য ফিলিস্তিনিদের হতাহতের সংখ্যা কোনো ব্যাপার নয়। এখন হামাসকে ধ্বংস করা এবং গাজার এক-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনিকে নির্মূলের বিভ্রমের মধ্যে রয়েছে তারা। তাদের এ পরিকল্পনায় হামাস বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্যই হামাসকে তারা সমূলে উৎপাটন করতে চায়।

ইসরায়েল কতটা বিভ্রমের মধ্য রয়েছে, তা বোঝা যায় যখন তারা ভাবছে, গাজায় স্থল অভিযান পরিচালনা ও ফিলিস্তিনিদের পদ্ধতিগত হত্যার পরও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তারা ভাবছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো প্রতিক্রিয়া আরব ও ইসলামী বিশ্ব থেকে জানানো হবে না কিংবা তারা তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না। তবে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক নীতি সমর্থিত গোঁড়া ইসরায়েলি সরকারের কেউই সম্ভবত এ সত্যটি সম্পর্কে সচেতন নয়– দখলদার কিন্তু নিজেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যত ত্যাগই স্বীকার করা লাগুক, মানুষের প্রতিরোধ সর্বদাই দীর্ঘ মেয়াদে বিজয়ী হয়। আফগানিস্তান যেমন ২০ বছর পর মুক্ত হয়েছে। তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউরোপীয় এবং পশ্চিমা দেশগুলো শেষ পর্যন্ত হার মেনেছে।

মনে আছে নিশ্চয়, যুক্তরাষ্ট্র নিরাপদে আফগানিস্তান ত্যাগের জন্য তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করতে বাধ্য হয়েছিল। এর মাধ্যমেই আফগানিস্তানে পশ্চিমা দখলের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং শেষমেশ তালেবান সেখানকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। আমরা তালেবানের মতাদর্শের সঙ্গে একমত না হতে পারি; একইভাবে হামাস কিংবা অন্যান্য জাতীয় প্রতিরোধ আন্দোলনের মতাদর্শও আমাদের সঙ্গে না মিলতে পারে; কিন্তু সত্য হলো, ইতিহাস সব সময়ই নিশ্চিত করছে– প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরই জন্য বিজয় অনিবার্য।

পরাজয় ও অপমান প্রতিটি দখলদার শক্তির জন্য অপেক্ষা করছে। তারা যতই শক্তিশালী ও অহংকারী হোক না কেন; দীর্ঘ মেয়াদে চলা প্রতিরোধ আন্দোলন আরও বেশি শক্তিশালী এবং সফল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ