• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন

কালিয়াকৈরে এক সড়ক নির্মানে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও বালির পরিবর্তে ভিটি মাটি

আপডেটঃ : বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮

কালিয়াকৈর প্রতিনিধি॥
গাজীপুরে কালিয়াকৈর উপজেলার কালিয়াকৈর-বাঁশতলী নতুন সড়ক নির্মানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্যাপক অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের নতুন সড়কের কাজে নি¤œমানের ইটের খোয়া ও বালির পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এই সড়ক কিছুদিনের মধ্যে ভেঙ্গে যাবে বলে শঙ্কা করছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার টান কালিয়াকৈর, সৈয়দপুর, রাজাবাড়ী, দিঘিবাড়ী, গর্জখালী, বাঁশতলী, কালিয়াদহ, বড়ইবাড়ী, গোপিনপুরসহ প্রায় ৪০টি গ্রামের লোকের দীর্ঘ দিনের আশা ছিল এই সড়কটির। তাই বর্তমান সরকার সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ করে দেয় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের। পরে বিশ^ ব্যাংকের অর্থায়নে ১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে কালিয়াকৈর-বাঁশতলী পর্যন্ত  প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। নিয়ম অনুযায়ী কাজটি পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েষ্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড। এ সড়কে ২৫টি ক্রসড্রেন, ৪ টি বক্স কালভার্ট ও ২০ মিটারের দুটি গার্ডার ব্রিজ রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট কাজটি শুরু হয়, তা শেষ হবে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল। কিন্তু এই ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান সড়ক নির্মানে ব্যাপক অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সড়ক ভরাট করার জন্য অন্যত্র থেকে মাটি ভরাট করার কথা থাকলেও দুপাশের ফসলের জমি নষ্ট করে মাটি কেটে সড়কে মাটি ভরাট করেছে। আবার এই সড়কে নি¤œমানের ইটের খোয়া ও বালির পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। ১৮ ফুট প্রস্থ রাস্তার কাজের মধ্যে মাটি ভরাট করে তার উপর প্রথম ধাপে ১০ ইঞ্চি ভিটি বালু দেওয়ার নিয়ম সেখানে দেওয়া হয়েছে ৭-৮ ইঞ্চি ভিটি মাটি। তার উপরে দ্বিতীয় ধাপ (সাব বেস) ৬ ইঞ্চি ৫০ ভাগ ইটের খোয়া ও ৫০ ভাগ বালু মিশ্রিণ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে, সেখানেও ইট নেই বললেই চলে। তার উপরে তৃতীয় ধাপে ৬ ইঞ্চি  (বেস) ৮০ ভাগ ইটের খোয়া ও ২০ ভাগ বালু মিশ্রিণ থাকার নিয়ম আছে। সেখানে নিয়ম অনুযায়ী ইটের খোয়া দেওয়া হচ্ছে না আর বাকি ২০ ভাগ বালি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এর স্থলে প্রায় ৬০ ভাগ ভিটি মাটি দেওয়া হয়েছে। রাস্তার মাঝে ১২ ফুট অংশে ৫০ মি.মি ও ৩ ফুট করে দুপাশে ১২ মি.মি কার্পেটিং করার কথা থাকলেও এখন কতটুক আছে তা মেপে দেখলে বুঝা যাবে। তবে পিচের সাথে যে, পাথর মেশানোর হয় তাতেও পাথরের সাথে মাটি দেখা গেছে। বর্তমানে প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কার্পেটিং করার করার আগে (বেসে) ইটের পরিমান কম থাকায় তার উপর দিয়ে ১ ইঞ্চি পরিমান কিছু ইট আর ভিটি বালি মিশিয়ে তা রুলার দিয়ে পেটানো হয়েছে। এভাবে সড়কের নি¤œ মানের কাজ করায় চলতি বর্ষার মৌসুমে কার্পেটিং উঠে সড়ক ভাঙ্গার শঙ্কা করছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
তবে লাল মাটি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ওই কাজের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আব্দুলাহ আল মামুনুর রশীদ জানান, এ কাজে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে না।
অনিয়ম বিষয়টি অস্বীকার করে ওয়েষ্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মাসুদ রানা জানান, ইতিমধ্যে সড়কের ৯০ ভাগ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আব্দুলাহ আল মামুনুর রশীদসহ সরকারী কর্মকর্তারা সর্বক্ষণ পরিদর্শণ করছেন। লাল মাটি কিছু গেলে তা ইচ্ছা করে দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া লাল মাটি গেলেও সড়কের জন্য ভাল। তবে এ কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষতি হবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী সরকার মো. সাজ্জাদ কবীর জানান, বালুর পরিবর্তে লাল মাটির ব্যবহারসহ যেসব অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ