আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পৃথক দুটি সংঘর্ষের ঘটনায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরসহ ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টা থেকে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফরিদপুর শহর ও সালথা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) তাদের সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন।
এর আগে গত রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে গট্টি ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ আলী শেখ (৫০) বাদী হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ওয়াদুদসহ ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী মো. সৈয়দ আলী বলেন, ঈদের পরের দিনে ক্যারাম খেলাকে কেন্দ্র করে লক্ষনদিয়া গ্রামের কয়েক যুবকের সাথে কথা কাটাকাটি হয় জুগিডাঙ্গা ও কাঠালবাড়িয়া গ্রামের যুবকদের। এরপর ওই রাতেই একদফা হামলা করে জুগিডাঙ্গা গ্রামের ৩ জনকে আহত করা হয়। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর রেশ ধরে রোববার বিকেলে দ্বিতীয় দফায় আবারও হামলা করা হয়। হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জুগিডাঙ্গা ও কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামে হামলা করে। এ সময় পাঁচটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং আরও তিনটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া চারটি গরু ও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন বাড়ি থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ ফায়েজুর রহমান বলেছেন, গত ১৪ এপ্রিল হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদসহ ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে দ্রুত বিচার আইনের মামলায় সোমবার বিকেলে ওয়াদুদসহ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। পরে তাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। বাকি ১৪ জনের বিরুদ্ধে পূর্বের বিভিন্ন অভিযোগে মামলা থাকায় তাদের সেসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতব্বর ছাড়াও উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মাঝারদিয়া ইউপির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহিদুজ্জামান ওরফে সাহিদ,গট্টি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ভাই মো. আবুল। ওয়াদুদ মাতব্বরকে রাত আড়াইটার দিকে ফরিদপুর শহরে তার ঝিলটুলিস্থ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত সালথার মাঝারদিয়া ও গট্টি ইউনিয়নে অন্তত তিনটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৩ এপ্রিল শনিবার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামে এলাকার প্রভাব বিস্তারকে নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহসভাপতি ও একই ইউপির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহিদুজ্জামান ওরফে সাহিদের বিরোধের জেরে সংর্ঘষ হয়। এতে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩০ জন আহত হন। পুলিশ গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।