• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১০:০৮ অপরাহ্ন

 সুয়েজ সংকট, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকি

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
ফাইল ছবি

গাজা থেকে শত শত মাইল দূরে অবস্থিত সুয়েজ খাল। এই খালের মাধ্যমেই লহিত সাগর দিয়ে ভূমধ্যসাগরের দিকে জাহাজ চলাচল করে, যা দূরত্ব কমিয়েছে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে। কিন্তু ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাতে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে সুয়েজ খালে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লহিত সাগরে বিভিন্ন জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। বিশেষ করে ইসরায়েলগামী জাহাজ লক্ষ্য করে।

গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এই পদক্ষেপ নিয়েছে ইয়েমেনের হুথি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৫ ডিসেম্বরের পর পাঁচটি বড় কন্টেইনার শিপিং কোম্পানি (সিএমএ সিজিএম, হ্যাপাগ-লয়েড, মারস্ক ও এমএস) লহিত সাগরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা মধ্যপ্রাচ্যে নেভাল কার্যক্রম জোরালো করেছে। লহিত সাগরে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক করতে তারা হুথির বিরুদ্ধে অভিযানও পরিচালনা করতে পারে।

আফ্রিকা ও আরব পেনিনসুলাকে আলাদা করেছে বাবএলমান্দেব প্রণালী। যেখান দিয়ে বিশ্বের প্রায় ১২ শতাংশ বাণিজ্য ও ৩০ শতাংশ কন্টেইনার ট্রাফিক সম্পন্ন হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হুথির হামলার কারণে জাহাজ চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

১৫ ডিসেম্বর একটি জাহাজে হামলার হুমকি দেয়, একটিতে হামলা চালানো হয় ড্রোন দিয়ে, পণ্যবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে চালানো হয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও। যেসব জাহাজে হামলা চালানো হয় তার সবগুলোই ছিল লিবারিয়ান পতাকাবাহী। ১৬ ডিসেম্বর মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ক্যারনি লহিত সাগরের ওপর থেকে অন্তত ১৪টি ড্রোন ভূপাতিত করে। ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজও একটি ড্রোন ধ্বংসের দাবি করে।

জাহাজ বিকল হয়ে যাওয়া ও ক্রুদের হতাহতের আশঙ্কায় চাপে পড়েছে শিপিং কোম্পানিগুলো। ১৫ ডিসেম্বর মারস্ক ও হ্যাপাগ-লয়েড তাদের সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর সার্ভিস বন্ধ করে সিএমএ সিজিএম ও এমসসি। বলা হয়েছে, লহিত সাগর নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত তারা কার্যক্রম বন্ধ রাখবে এবং কিছু জাহাজকে কেপ অব গুড হোপ দিয়ে পরিচালনা করা হবে।

সার্ভিস বন্ধ করা এই চারটি কোম্পানি বিশ্বের কন্টেইনার বাণিজ্যের ৫৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এখন ছোট ছোট কোম্পানি যেমন ড্রাই বাল্ক ও অয়েল ট্যাঙ্কারস তাদের অনুসরণ করতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে তাৎপর্যপূর্ণ দুইটি সমস্যা সামনে আসছে। একটি হলো বিশ্ব অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব। আর অন্যটি হলো মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি। মিশরের আয়ের অন্যতম উৎস হলো সুয়েজ খাল থেকে রাজস্ব আয়। আগে থেকেই দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। যদিও ইসরায়েল এই পথে মাত্র পাঁচ শতাংশ বাণিজ্য সম্পন্ন করে। কিন্তু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বৈশ্বিক অর্থনীতি। কারণ এই পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ হলে আফ্রিকার পথ দিয়ে দীর্ঘ পথ ঘুরে শিপিং কার্যক্রম চালাতে হবে। এত বেড়ে যাবে সময় ও খরচ। ২০২১ সালে সুয়েজ খালে একটি জাহাজ ছয়দিন ধরে আটকে ছিল। এতে ব্যাহত হয় বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা।

বর্তমান বাস্তবতায় হুথি বিদ্রোহীরা বিভিন্নভাবে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এই মুহূর্তে তাদের দমন করার প্রক্রিয়া জটিল। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের মৃত্যু চায়। গাজায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ সচল না করা পর্যন্ত ইসরায়েলগামী জাহাজে হামলার ঘোষণা দিয়েছে তারা। কিন্তু সম্প্রতি নির্বিচারে অর্থাৎ লহিত সাগরের যেকোনো জাহাজকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে হুথি। এতে হুমকিতে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ